• শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ অপরাহ্ন

সরকার সাড়ে ৭ কোটি চীনা টিকা কিনতে চায়

Reporter Name / ৯৩ Time View
Update : শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : চীন থেকে সাড়ে ৭ কোটি ডোজ সিনোফার্মের টিকা কিনতে চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে এই পরিমাণ টিকার ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে। দেড় কোটি টিকার জন্য আগাম দামও দেওয়া হয়েছে।

টিকাগুলো কেনা হবে সিনোফার্ম টিকা উৎপাদনকারী চীনা প্রতিষ্ঠান বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টসের কাছ থেকে। তাদের কাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে টিকা কেনার পাশাপাশি যৌথভাবে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের জন্যও চুক্তি হতে যাচ্ছে। বেসরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্‌টাকে যুক্ত করে সিনোফার্ম ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এই চুক্তি সই হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মাথায় দেশে সিনোফার্মের টিকা যৌথভাবে উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ।

এর আগে গত জুনে বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টসের সঙ্গে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৭০ লাখ টিকা ইতিমধ্যে দেশে এসেছে। চলতি মাসেও কমপক্ষে ৫০ লাখ টিকা আসতে পারে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা আরও বলছেন, সংখ্যাটি বাড়তেও পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক অনুষ্ঠানের পর জানিয়েছেন, চীন থেকে কেনার পরিকল্পনায় থাকা সাড়ে ৭ কোটি ডোজ টিকার মধ্যে দেড় কোটির দাম পরিশোধের পর বাকি ৬ কোটি কেনা নিয়ে কাজ চলছে। যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা যেকোনো সময় হতে পারে। ওরা (চীন) আমাদের কাছে (চুক্তির খসড়া) গত ১৬ জুলাই দিয়েছে। সেদিনই আমরা সেটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, খসড়া দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরদিন তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয় খসড়াটি ‘ভেটিং’ করে পরদিনই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটি এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক আছে। ইনসেপ্‌টা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেকোনো সময়ে চুক্তি সই করা উচিত। চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে টিকা উৎপাদন শুরু হবে।

সরকার দুই মাসের মধ্যে ৮ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার অবস্থান থেকে সরে এসেছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতি সপ্তাহে এক কোটি করে মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। তবে টিকা এনে আমরা রেখে দিতে পারি না। ধাপে ধাপে টিকা আনতে হচ্ছে। তাই আট সপ্তাহে দেশের অর্ধেক লোককে টিকা দেওয়ার বিষয়টি এদিক-সেদিক হতে পারে।’

দেশে প্রথম করোনার টিকা আসে গত ২১ জানুয়ারি। ওই দিন ভারত উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ২০ লাখ টিকা দেয়। এর আগে অবশ্য গত নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি টিকা কিনতে চুক্তি করে সরকার। গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় গণটিকাদান। তবে সেরাম দুই দফায় ৭০ লাখ ডোজ দিয়ে বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। কারণ, কাঁচামালের সংকট ও ভারতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির ফলে গত এপ্রিলে সে দেশের সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এরপরই বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে টিকার খোঁজ করতে শুরু করে। চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়। রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। পাশাপাশি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে ঘাটতি পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন দেশকে অনুরোধ জানানো হয়।

বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা কেনা ও সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তির পর চীনের প্রতিষ্ঠান বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছিল যে এ দেশের বাড়তি টিকা লাগবে কি না। বাড়তি টিকা লাগলে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী গত ১৬ জুলাই চীনের বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টসকে বাংলাদেশ জুন মাসে করা চুক্তির আওতায় দেড় কোটি টিকার বাইরে আরও দেড় কোটি ডোজের চাহিদার কথা জানায়।

এরপর চীনা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে মোট সাড়ে ৭ কোটি টিকা কেনার পরিকল্পনার কথা জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আরও টিকা আসছে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে চলতি আগস্ট ও আগামী মাস সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ১ কোটি ৪ লাখ ডোজ টিকা পেতে যাচ্ছে। এর মধ্যে আগামী সপ্তাহে কোভ্যাক্সের আওতায় পাওয়া যাবে সিনোফার্মের ৩০ লাখ টিকা। চলতি মাসে কোভ্যাক্স অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরও ১০ লাখ টিকা পাঠাবে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কোভ্যাক্স থেকে আসবে ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা।

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে ২ কোটি ৫৬ লাখের কিছু বেশি টিকা হাতে পেয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছে মোট ১ কোটি ৩ লাখ। চীন থেকে ৮১ লাখ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৬ লাখ ও জাপান থেকে সাড়ে ১৬ লাখের মতো টিকা এসেছে। ভারত উপহার দিয়েছে ৩৩ লাখ টিকা। চীন দিয়েছে ১১ লাখ। তারা আরও ৩০ লাখ দেবে। যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ৫৫ লাখ ও জাপান দিয়েছে ৩০ লাখ। জাপানের দেওয়া ৩০ লাখ ডোজের মধ্যে ১৬ লাখের মতো দেশে এসেছে।

বাংলাদেশ সরকার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে চায়। এ জন্য দরকার ২৬ কোটি টিকা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কোভ্যাক্সের আওতায় এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৬ কোটি টিকা পাওয়ার কথা। এরপর আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকা কেনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, কোভ্যাক্স থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জনসনের টিকা কিনবে। এই টিকার ডোজ একটি এবং সংরক্ষণ সহজ। যেহেতু আগামী বছরের শুরু থেকে কোভ্যাক্সের আওতায় জনসনের বাজারজাত হবে, তাই তারা এটি বাংলাদেশকে দিতে আগ্রহী।

আরবিসি/০৬ আগস্ট/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category