• বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ পূর্বাহ্ন

সারি সারি তালগাছে নান্দনিক সড়ক

Reporter Name / ১৯৪ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

নওগাঁ প্রতিনিধি: সৌন্দর্যের শোভা ছড়াচ্ছে সারি সারি তাল গাছ। নওগাঁর মহাদেবপুরের পল্লীতে ৩ কিলোমিটার জুড়ে প্রায় ৫ হাজার তাল গাছ পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি পরিনত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক বিনোদন কেন্দ্রে। নির্মল বাতাস আর বিপুল এ তাল সাম্রাজের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দুর-দুরান্ত থেকে আসছেন বিনোদন প্রেমী মানুষ।

স্থানীয়রা বলছেন, ৩০ বছর আগে রোপন করা এসব তাল গাছ বজ্রপাত রোধেও রাখছে ব্যাপক ভূমিকা। প্রান্তিক পর্যায়ের এ তাল বাগান রক্ষাসহ অবকাঠামো উন্নয়নের আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের। শ্রাবনের ভরা মওসুমে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠগুলো টইটম্বুর পানিতে। সে পানিতে প্রস্তুতি চলছে রোপা আইউশ আবাদের। বিস্তৃত মাঠের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে আঁকা বাঁকা সড়ক। আশেপাশের অন্তত ২০ গ্রামের সংযোগ সড়কটি স্বাধীনতার পর স্থানীয় বাসিন্দারা তৈরি করেন।

প্রথম দিকে সড়কটি গ্রামের মানুষের জন্য ছিল মেঠো পথ। তবে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের আওতায় সম্প্রতি পাকা করা হয়েছে সড়কটি। নওগাঁর মহাদেবপুরের খাঁজুর ইউনিয়নের কয়ারপাড়ার ১২ কিলোমিটারের এ সংযোগ সড়কের ৩ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে সারি সারি তাল গাছ। তাল গাছ এক পায়ে দাড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কবিতার মতো মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকা তাল বাগান বিনোদন প্রিয় মানুষের কাছে এক ভিন্ন আমেজ তৈরি করেছে।

সড়কের দুই পাশে নিবিড় তাল গাছগুলোকে সাদা চুনকাম করায় দুর থেকে দেখলে ফুটে উঠে গ্রামীণ আবহের এক অনন্য চিত্র। চারপাশে বিস্তৃত সবুজ মাঠের গ্রামীণ নির্মল পরিবেশ আর মুক্ত বাতাশ এক ভিন্ন আবহের শোভা ছড়াচ্ছে। আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে গ্রামীণ এ মেঠো পথ নিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলেন স্থানীয় কয়ারপাড়া গ্রামের বৃক্ষ প্রেমিক খিতিশ চন্দ্র। নিজ উদ্যেগে বিভিন্ন জায়গা থেকে তাল বীজ সংগ্রহ করে সড়কের দুই পাশে রোপন করেন তিনি।

সময়ের ব্যবধানে এসব তাল গাছ বজ্রপাত রোধে যেমন রাখছে অবদান অন্যদিকে সৌন্দর্যের শোভা ছড়াচ্ছে বিনোদন প্রিয় মানুষের কাছে। জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দুরের এ তাল সাম্রাজ্য পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সড়কের দুই পাশের এ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করছে দর্শনার্থীদের।

প্রয়াত খিতিশের ছেলে তপন মন্ডল জানান, তার বাবা কোন স্বার্থ নিয়ে এসব গাছ রোপন করেনি। পরিবেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসায় রোপন করেছিলেন এসব তাল বীজ। জীবিত অবস্থায় তার এ তাল বাগানের মুল্যায়ন করতে না পারলেও মহত এ কাজের জন্য স্বজন ও এলাকাবাসী গর্বিত।

স্থানীয় প্রবীন শিক্ষক আশরাফ আলী, বলরাম চন্দ্র বর্মন জানান, জীবিত অবস্থায় আমরা খিতিশের মুল্যায়ন করতে পারিনি। কিন্তু আজ খুব ভাল লাগছে তার কাজের মুল্যায়ন হচ্ছে দেখে। করোনা ও লকডাউনের মাঝেও সকাল বিকাল দুর-দুরান্ত থেকে তাল বাগানের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ দেখতে আসছে নানা বয়সী মানুষ। নির্মল প্রকৃতির নির্যাস নিতে ক্ষনিক সময় পার করেন আগত দর্শনার্থীরা। তাল সাম্রজ্যের এ সৌন্দর্য ধরে রাখতে বাড়তি কিছু অবকাঠামো গড়ে তোলার দাবী তাদের। এ তাল বাগানকে সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভুমিকা তুলে ধরে স্থানীয়ভাবে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করছে।

সংগঠনের প্রধান প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন বলেন, আজ আমরা তাল বাগানের জন্য যেমন পুলকিত। সেই সাথে এ তাল বাগানের স্রষ্টা খিতিশের চেতনা নতুন প্রজম্মের মাঝে তুলে ধরতে চাই।

খাজুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে প্রয়াত খিতিশের মতো আরো বেশি তাল বাগান গড়ে তুলতে কাজ করবেন। আর তাল বাগানের দৃষ্টিনন্দন এ পরিবেশ রক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান।

আরবিসি/০৩ আগস্ট/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category