• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীর পদ্মায় অবৈধ বালুরাজ্য

Reporter Name / ১৩৫ Time View
Update : সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীর মধ্যশহর তালাইমারী এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এর আগে একাধিকবার পদ্মাপাড়ের এই পয়েন্টটিতে অভিযান পরিচালনা করে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন। এর পরও থামেনি এখানে অবৈধ বালু কারবার।

নগরীর তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দফতরেও। অভিযোগগুলিতে বলা হয়েছে তালাইমারী পয়েন্টে কোন বৈধ বালুঘাট বা বালুমহাল নেই। এর পরও প্রশাসনের নাকের ডগায় বালুদস্যুরা সেখানে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।

রবিবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তালাইমারী পদ্মাপাড়ে বালুর পাহার তৈরী করা হয়েছে। সারাদিন ড্রেজিং করে পাইপের মাধ্যমে সেখানে বালু মজুদ করা হচ্ছে। আর ঠিক সন্ধ্যা হলেই সারি সারি ট্রাক সেখান থেকে বালু পরিবহন করছে। ভোর পর্যন্ত চলে বালুদস্যুদের এই বালু লুটের মহোৎসব। সেখান থেকে নদীর ৬ কিলোমিটার ভাটিতে শ্যামপুর বালুমহালের ইজারাদার ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন তার নির্ধারিত এলাকার বাইরেও এভাবে বালু লুট করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগে বলা হয়েছে, নগরীর তালাইমারী মধ্যশহরের একটি পয়েন্ট। ঘন জনবসতিতে পূর্ণ। পদ্মার বাঁধ কেটে নিজেরা সড়ক বানিয়ে একদল বালুদস্যু কয়েক মাস আগে তালাইমারী দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন। পদ্মার বুকে রাস্তা তৈরী করেও তারা বালু তোলে। এলাকাবাসীর অভিযোগে পেয়ে জেলা প্রশাসন থেকে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তা বন্ধ করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষে সেখানে নোটিশও লাগানো হয়েছিল।

কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পর বালুদস্যুরা আবার রাতের আঁধারে বালু লুট শুরু করে। পদ্মায় পানি আসায় বর্তমানে বালু মজুদ করা হয়েছে পাড়ে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর বুক থেকে বালু তুলে জমা করছে পাড়ে। ভেক্যু দিয়ে ওই বালু ট্রাকে ভরছে। এসব বালু নগরীর বিভিন্ন সড়ক ধরে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। এভাবে শত কোটি টাকার বালু লুট হলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা নিয়েছে। এলাকাবাসী তাদের বাধা দিতে গেলে তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী তাদের আর বাধা দিতে সাহস পাচ্ছে না।

এ কারণে এলাকাবাসী ও অন্য বালুমহালের ইজারাদাররা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসক ও পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকা দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে ইতোপূর্বে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন। উচ্চ আদালত তালাইমারী এলাকায় কোনো বালুঘাট বা বালুমহাল না থাকায় তা বন্ধের আদেশ জারি করেন। কিন্তু সেই আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এখন একদল চিহ্নিত বালুদস্যু উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই তালাইমারীতে পদ্মার বুক থেকে অবাধে বালু লুট করছে।

তালাইমারী ঘাট এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী অভিযোগে বলেন, সন্ধ্যা হলেই তালাইমারী ঘাটে চলে আসে ট্রাক, ট্রাক্টও, ডাম্বার ও ভেক্যু। ভোর পর্যন্ত চলে অবৈধ বালু কারবার। সারারাত অর্ধশত ট্রাক চলাচল, পেলুডার মেশিন ও স্কেভেটরের শব্দে পদ্মারপাড়ের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এছাড়াও পদ্মাপাড়ে বালু মজুদ করায় ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে এলাকাটি। এ নিয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

রমজান বলেন, প্রশাসনকে অভিযোগ দিলে তারা বলে থাকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপেক্ষা করেন। তবে তারা আর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। তালাইমারী নগরীর একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখান দিয়ে বালু উত্তোলনে মানুষের জীবনযাপন সমস্যায় পড়ছে।

এ নিয়ে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে আনোয়ার হোসেনকে পাওয়া যায়নি। তবে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, তালাইমারী এলাকায় কোন বালুমহাল নেই। সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। নতুন করে সেখানে বালু তোলা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেন জেলা প্রশাসক।

আরবিসি/০২ আগস্ট/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category