আরবিসি ডেস্ক: পাঁচ দিনে আরও এক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল করোনাভাইরাস, দেশে কোভিডে মৃত্যুর মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ২১ হাজার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৩ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৯৮৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৪৬ জনের।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার ৩১৭ জন। তাদের মধ্যে ২১ হাজার ১৬২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। ঈদের ছুটির পর কঠোর লকডাউনের মধ্যেই গত ২৮ জুলাই দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজারের দুঃখজনক মাইলফলক পেরিয়ে গিয়েছিল। তা ২১ হাজারে পৌঁছাল মাত্র পাঁচ দিনে।
আগের দিন সারা দেশে ১৪ হাজার ৮৪৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই হিসাবে এক দিনে শনাক্ত ও মৃত্যু দুটোই বেড়েছে বেশ খানিকটা। গত এক দিনে যে ২৪৬ জন মারা গেছেন, তাদের ৭৬ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৪ জন এবং খুলনা বিভাগে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আর এই সময়ে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৭ হাজার ৬৬০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক। সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৫ হাজার ৪৮২ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১১ লাখ ৮ হাজার ৭৪৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৭ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ১২ লাখ পেরিয়ে যায় এ বছর ২৮ জুলাই। সেদিনই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সোমবার তা ২১ হাজার ছাড়াল। এর আগে ২৭ জুলাই দেশে রেকর্ড ২৫৮ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত রোগী ইতোমধ্যে ১৯ কোটি ৮৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৪২ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মানুষের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৫৩ হাজার ৪৬২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৫টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা আগের দিন ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল।
দেশে এই পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ঢাকা জেলায় গত এক দিনে ৫ হাজার ২৮৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে ৩৪৩ জন, কিশোরগঞ্জে ২৯০ জন, মানিকগঞ্জে ১৫৩ জন, মুন্সিগঞ্জে ১৭৫ জন, নরসিংদীতে ১৫১ জন, নারায়ণগঞ্জে ২১৭ জন, শরীয়তপুরে ১৪৯ জন, টাঙ্গাইলে ২৪৭ জন এবং রাজবাড়িতে ১৯১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯৮৫ জন, কক্সবাজারে ২৩৪ জন, চাঁদপুরে ৩৩৬ জন, কুমিল্লায় ৮০৬ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৭৩ জনের কোভিড ধরা পড়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২২২ জন, পাবনায় ১২৩ জন, বগুড়ায় ১২৬ জন এবং সিরাজগঞ্জে ১১৬ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত এক দিনে। খুলনা বিভাগের মধ্যে কুষ্টিয়ায় ৪৮০ জন, ঝিনাইদহে ১৯৪ জন, খুলনায় ১৬৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহে ৪৯৫ জন, রংপুরে ১৫৪ জন, বরিশালে ২৮২ জন, ভোলায় ১৬০ জন, পটুয়াখালীতে ১২৯ জন, সিলেটে ৪৭৯ জন, সুনামগঞ্জে ১০৭ জন, হবিগঞ্জে ৭৭ জন এবং মৌলভীবাজারে ১৯০ রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৩৬ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৫৩ জন জনের মধ্যে ১৯ জন কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া খুলনা বিভাগে ৩০ জন, রাজশাহী বিভাগে ২২ জন, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ১৪ করে মোট ২৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে। মারা যাওয়া ২৪৬ জনের মধ্যে ১২২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৭১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩৩ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৩ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল। তাদের মধ্যে ১৩৭ জন ছিলেন পুরুষ, ১০৯ জন ছিলেন নারী। ১৮১ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে, ১৫ জন বাসায় এবং ১ জন হাসপাতালে আনার পথে মারা যান।
আরবিসি/০২ আগস্ট/ রোজি