• শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন

স্বাধীন বাংলাদেশে তোর ছেলে হবে, তার নাম জয় রাখবি

Reporter Name / ১১৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তখন কেবল আমি সন্তানসম্ভবা। আমি সাধারণত সব সময় আমার বাবার হাত-পায়ের নখ কেটে দিতাম। এটা আমার নিয়মিত একটা কাজ ছিল। ওইদিন উনি (শেখ মুজিব) যখন বৈঠক করে এসে বিশ্রাম নিতে বসছেন দুপুরে, আমি তখন একটা মগে পানি নিয়ে তার হাতের নখ কেটে দিচ্ছিলাম। আমাকে তিনি বলছেন, হ্যাঁ ভালোভাবে কেটে দে। দেখিস আর এই সুযোগ পাবি কী না। তবে তোর ছেলে হবে। সেই ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম নেবে। তার নাম ‘জয়’ রাখবি।

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ উদযাপন এবং ‘জনপ্রশাসন পদক ২০২০ ও ২০২১’ দেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে ইয়াহিয়া খান ঢাকায়, সারা বাংলাদেশে কিন্তু পাকিস্তানি পতাকা কেউ ওড়ায়নি। সমস্ত বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। ৩২ নম্বরের বাড়িতেও আমার বাবা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। যদিও পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ঢাকায় ছিল, কিন্তু তাকে সবাই অস্বীকার করেছিল।

তিনি বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তারপরেই আমাদের বাসাটা আক্রমণ করে এবং তাকে (বঙ্গবন্ধুকে) গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এই আক্রমণের কিছু মুহূর্তে আগে আমি, আমার ছোট বোন রেহানা এবং আমার একটা খালাতো বোন জেলিকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমার বাবা একরকম জোর করেই আমাদের পাঠিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ভাই কামাল আগেই চলে গিয়েছিল ব্যারিকেট দিতে। জামাল আর রাসেল মাকে ছেড়ে যাবে না। মার সঙ্গে থেকে যায়। আমাদের বাসা আক্রমণ করে বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। এর কিছুদিন পর আমার মা, ছোট ভাই রাসেল, জামাল, আমি, ছোট বোন রেহানা আমরা সবাই গ্রেফতার হই। আমাদের ১৮ নম্বর রোডের একটা পরিত্যক্ত একতলা বাসায়, একজন অ্যাম্বাসেডর থাকতেন আহসানউল্লাহ সাহেব। উনি বিদেশে থাকেন। বাসার দরজা বন্ধ ছিল। ওই বাসায় আমাদের রাখা হয়।

তিনি বলেন, যখন আমার সন্তান প্রসবের সময় হয় তখন আমাকে হাসপাতালে যেতে দিয়েছিল পাকিস্তানি মিলিটারি। কিন্তু আমার মাকে যেতে দেয়নি। তখন হাসপাতলে ডাক্তার নুরুল ইসলাম সাহেব ছিলেন দায়িত্বে। আমাদের ডাক্তার সুফিয়া খাতুন, তিনি ও ডাক্তার ওদুদ সাহেব। শায়লা আপাও ছিলেন। আমাদের মুহিত সাহেবের বোন। অধ্যাপক শায়লা। আসলে জয়ের জন্মটা মেডিকেল কলেজেই হয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আমাদের একটা সুযোগ ছিল সব সময় যোগাযোগ রাখার, আমি সেটা রাখতামও। আমি যখন বন্দি, সে অবস্থায় জয়ের জন্ম। তার নাম আমরা জয়ই রেখেছিলাম। পাকিস্তানের একজন কর্নেল আসে। জয়কে নিয়ে আমরা ফিরে আসি আমাদের বাংলোতে, কারাগারেই। এসে আমরা ঘরের বাইরে, আমি তখন বারান্দায় দাঁড়ানো। আমাকে তখন জিজ্ঞেস করে ওর নাম কী? আমি বলি জয়। বলে, মানে? আমি বলি জয় মানে ভিক্টোরি, জয় মানে জয়। তো খুব ক্ষেপে যায় এবং এই ছোট শিশুটাকেও তারা গালি দেয়।

তিনি বলেন, কাজেই এইরকম একটা পরিবেশেই কিন্তু জয়ের জন্ম। সেখানে আমরা ফ্লোরেই থাকতাম। কোন প্রাইভেসি ছিল না। একতালা একটা বাড়ি। কাজেই ওই অবস্থার মধ্যে খাওয়া দাওয়ার কোনো ঠিক ছিল না। কারণ ওকে (জয়) নিয়ে যখন আমি একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়িতে শেল্টার নিই, তখন জানি না কীভাবে বেঁচে ছিলাম। খাওয়া দাওয়া কোনো কিছুর ঠিক ছিল না। আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতাম, আমার বাচ্চাটা যেন একটা সুস্থ্য বাচ্চা হয়। আমার মা সবসময় সেই দোয়াই করতেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই জয়ের জন্মদিন। আজ তার ৫০ বছর হলো। এই করোনার কারণে আমরা সবাই এক হতে পারলাম না। এইটা আরেকটা দুঃখ। আপনারা এই দিনটি স্মরণ করছেন, সেই জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, এটা কিন্তু জয়েরই ধারণা, জয়েরই চিন্তা।

তিনি বলেন, আমি যখন ৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করি, তার জন্য বারবার আমাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে, বন্দি হতে হয়েছে কখনও। আমাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। ওই গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় আমার আব্বার বন্ধু আজিজ সাত্তার কাকা নালিতা নিয়ে জয়-পুতুলকে ভর্তি করে দেন। সেখানে পড়ালেখা করতে গেলে স্কুল থেকেই কম্পিউটার শিক্ষা দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, যখন ছুটিতে আসতো কম্পিউটার নিয়ে আসতো। জয়ের কাছ থেকে আমি কম্পিউটার শিখেছি। যখন ৯১ সালে আমরা পার্টির জন্য কম্পিউটার কিনি, অনেক দাম ছিল তখন। সেই যুগে সাড়ে তিন লাখ টাকা লেগেছিল একটা কম্পিউটার আরেকটা প্রিন্টার কিনতে। কাজেই আমাদের আলোচনা হতো আমরা আমাদের দেশে এই কম্পিউটার শিক্ষা কীভাবে প্রচলন করবো।

সরকার প্রধান বলেন, ৯৬ সালে যখন প্রথম সরকার গঠন করি। তখন প্রতি সভায় আমাকে পরামর্শ দিতো। তখন বলল যে এর উপর থেকে ট্যাক্স তুলতে হবে। সস্তা করতে হবে। মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে হবে। তাহলে এটা মানুষ শিখবে এবং মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কাজেই সেই ভাবেই কিন্তু আমাদের এই ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু।

তিনি বলেন, আমি যখন কম্পিউটার ব্যবহার করি তখন আমি দেখেছি ৯৬ সালে সরকারে এসে কেউই কম্পিউটার ব্যবহার করে না। টেবিলে একটা ডেক্সটপ রাখা থাকতো মাত্র। অনেকে হাত দিতেই সাহস পেত না। সরকারে আসার পর আমিই প্রথম নির্দেশ দেই প্রত্যেকটা ফাইল আমাকে কম্পিউটারে টাইপ করে আসতে হবে। আমরা সেভাবে দেখতে চাই। এরপরে সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য একটা ন্যাশনাল কমিটি আমি করে দিয়েছিলাম। কিভাবে আমরা এই নতুন প্রযুক্তিটা আরো ব্যাপকভাবে প্রচার করতে পারি, প্রসার করতে পারি। এগুলি গোছাতে গোছাতে অনেক সময় চলে যায়। তখন কিছু মানুষ এই ৫ বছরে আস্তে আস্তে ব্যবহার করা শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ল্যাপটপ ব্যবহার করা কম্পিউটার ব্যবহার করা আমাদের প্রত্যেকটা অফিসে ততদিনে শুরু হয়ে যায়। এমনকি আমাদের বিদেশি দূতাবাসে ব্যবহার হতো না। আমেরিকায় আমাদের দূতাবাসের যে বিল্ডিংটি আমরা তৈরি করে দিই, সেখানেও কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করতো না। যদি কোন কাজ করতে হতো জয় চাকরি করতো, সেই চাকরি করে এসে সেগুলি টাইপ করে আমাকে ইমেইলে পাঠাতো। আমি এখান থেকে প্রিন্ট আউট করে আমাদের অফিসের হাতে দিতাম যে এটা এভাবে এভাবে করতে হবে। কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে আমাদের যথেষ্ট এভাবে কাজ করতে হয়েছে, একটা সময়ে।

তিনি বলেন, আমরা আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এবং ধাপে ধাপে কতোগুলি কাজ আমরা করেছি। সবগুলি কিন্তু তার পরামর্শে। কারণ সে কম্পিউটার সাইন্সে ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি নেয়। এর পরবর্তী সময়ে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নেয়। এরপর হার্ভার্ড থেকে মাস্টার ডিগ্রি নেয়, সেটা ২০০৭ সালে। আমি তখন তাকে ওখানে জোর করে ভর্তি করাই। কিন্তু আমি তাকে কোনো সাহায্য করতে পারিনি। কারণ আমিই তখন বন্দি হয়ে যাই। কিন্তু সে তখন ওইটা কনটিনিউ করে এবং মাস্টার ডিগ্রিটা পাবলিক সার্ভিসের ওপরেই করে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি এইটুকু বলবো যে আজকে যে আমরা বাংলাদেশটাকে ডিজিটাল করতে পেরেছি, প্রযুক্তির শিক্ষাটাকে পপুলার করতে পেরেছি এবং আমাদের যুব সমাজ, তরুণ সমাজ। এই তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা। তরুণ সমাজ যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই ভাবে জয়, আমার বোনের ছেলে রেদওয়ান থেকে শুরু করে সবাই কিন্তু সেভাবে কতগুলো উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছে। যার ফলটা আজকে বাংলাদেশ ভোগ করছে।

আরবিসি/২৭ জুলাই/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category