• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

কতটুকু বলা যায়, কতটুকু যায় না

Reporter Name / ১০৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : প্রতিবাদের মুখে ইউটিউব থেকে ‘ঘটনা সত্য’ নামের একটি নাটক প্রত্যাহার করে নিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভি। অভিযোগ রয়েছে, নাটকটিতে বিশেষ শিশুদের বিষয়ে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন নাটকটির শিল্পী ও কলাকুশলীরা। তারপরও প্রশ্ন থাকে। একটা নাটক তৈরি থেকে প্রচার হওয়া পর্যন্ত অনেক ধাপ পার হতে হয়, কোনো ধাপেই কেন বিষয়টা কারও নজরে এল না, আর এর প্রতিকারই–বা কীভাবে? নাট্য অঙ্গনের কয়েকজনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মনজুর কাদের
মনজুর কাদের

টেলিভিশনের পাশাপাশি এখন ইউটিউবের জন্যও নাটক বানান প্রযোজক-পরিচালকেরা। নাটক বানানোর এই মিছিলে গানের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানও যোগ দিয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর একটা প্রধান লক্ষ্যই থাকে ভিউ বাড়ানো, ভাইরাল হওয়া। আর এই মানসিকতার কারণেই ধীরে ধীরে দায়িত্বজ্ঞানহীন, নৈ‌তিকতাবর্জিত, অসং‌বেদনশীল, রুচিহীন ও মেধাহীনদের হাতে চলে যাচ্ছে নাটক।

অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন, টেলিভিশনে প্রচারের আগে প্রিভিউ কমিটি নাটক দেখত। নাটকগুলো এখন নামকাওয়াস্তে টেলিভিশনে প্রচারিত হয়, তারপর ইউটিউব বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে চলে যায়। তাই এসব নাটকের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের কোনো দায়দায়িত্ব থাকে না। ইউটিউব বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে তো দেখার কেউ নেই। এখানে সবচেয়ে বড় সেন্সরশিপ তো পরিচালক এবং নাট্যকার। এখন পরিচালক জানেন না, কতটুকু বলা যায়, কতটুকু বলা যায় না। একজন নির্মাতাকে বলা হয়, ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ। এখন পরিচালককে তাঁর কাজটা ঠিকমতো বুঝতে হবে।’

প্রতিকারের উপায়ও বলে দিলেন সেলিম, ‘টেলিভিশন যদি নাটক বানায়, তাহলে সেটার একটা যথাযথ কার্যকর শক্তিশালী অনুষ্ঠান বিভাগ থাকতে হবে, প্রিভিউ কমিটি থাকতে হবে। ইউটিউবে যে কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে, সেই কনটেন্টের সস্তা জনপ্রিয়তা এবং ভাইরাল হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদেরই ভাবতে হবে, সচেতন হতে হবে, দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে।’

ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলুও টেলিভিশনে নাটক প্রচারের ক্ষেত্রে কার্যকর প্রিভিউ কমিটি এবং শক্তিশালী অনুষ্ঠান বিভাগের কথা বলেছেন। তিনি বললেন, ‘এখন যে প্রক্রিয়াতে নাটক নির্মিত হচ্ছে, সেটাও সঠিক পদ্ধতি না। চ্যানেলগুলোও বিভিন্ন এজেন্সির কাছে চাঙ্ক বিক্রি করে দিয়েছে। তাই নাটকের প্রিভিউ করার সুযোগ থাকে না। নাটক বানানোর সময় সেল্ফ সেন্সরশিপ, সমাজের প্রতি দায়, দেশের প্রতি দায় থাকতে হবে। যাঁরা নাটক বানান বা অভিনয় করেন, তাঁদের উচিত, সেই নাটকের সংলাপ বা বিষয়বস্তু সমাজের কতটা উপকারে আসবে বা কতটা ক্ষতিকর হবে।’ সালাহউদ্দিন লাভলু চান, দেশের সব পরিচালক যেন সংগঠনভুক্ত থাকেন। এতে সেই পরিচালকদেরও সংগঠনের প্রতি জবাবদিহি থাকবে।

এই বিষয়ে পরিচালক অমিতাভ রেজা শিক্ষার ওপরই জোর দিলেন বেশি, ‘সৃজনশীলতা, নন্দনতত্ত্ব ও নান্দনিকতার ওপরই নির্ভর করবে নাটকের কাহিনি এবং দর্শককে সে কী দেখাতে চায়। দর্শক আকৃষ্ট করা, ভিউ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা, ভাইরাল হওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ভুল হলে অবশ্যই দায় নিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন আর ভুল না হয়, সেই শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে।’

নাট্যজন মামুনুর রশীদ জানালেন, ইউটিউবে যা খুশি তা–ই চলছে। কোনো ধরনের অভিভাবকত্ব নেই। আর টেলিভিশনে কেউ এখন আর নাটক প্রিভিউ করে না। বেশির ভাগ টেলিভিশন মার্কেটিং বিভাগের ক্লিয়ারেন্সে অনুষ্ঠান চালায়। মার্কেটিংয়ে কিছু অসাধু লোক কিছু এজেন্সির সঙ্গে যোগসাজশ করে নাটক বানায়। তিনি বললেন, ‘শুনেছি, ঈদের নাটকের ক্ষেত্রে কয়েকটা এজেন্সি শিল্পীদের কিনে রাখে! তারা এ–ও বলে ২০টা নাটক করে দিতে। যেগুলোর প্রচারের আগে না হয় প্রিভিউ, প্রচারের পর না হয় রিভিউ। শোনা যায় একদম শেষ মুহূর্তে নাটকগুলো জমা পড়ে।’ মামুনুর রশীদ এ–ও বললেন, ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ বেশি জরুরি। অভিনয়শিল্পীদের টাকা পেলাম, অভিনয় করলাম মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দায়বোধ বাড়াতে হবে। অনলি মানি ম্যাটারস, নার্থিং ম্যাটারস—এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের শিক্ষা বাড়াতে হবে।’

আরবিসি/২৭ জুলাই/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category