স্টাফ রিপোর্টার : শেষ সময়ে অনলাইন ছেড়ে কোরবানীর হাটে হাটে ছুটছেন মানুষ। এতে জমে উঠেছে রাজশাহীতে পশু বিক্রি। এ অবস্থায় মুথ থুবড়ে পড়েছে কোরবানীর পশু কেনাবেচার অনলাইন প্লাটফর্ম। পশু বিক্রেতা বলছেন, অনলাইনের চেয়ে হাটেই পশু বিক্রি উত্তম। এখানে সরাসারি দরদাম করে বিক্রি করা হচ্ছে। অনলাইনে কোরবানীর পশু বিক্রির উপায়ও তারা অনেকে জানেন না। তাই অনেকটাই ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে ক্রেতারা গরু কিনছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মুখে থাকছে না মাস্ক। তাঁরা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধিও।
উত্তবঙ্গের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহীর সিটিহাট। রাজশাহী নগরীর উপকেণ্ঠ অবস্থিত এই হাট। সোমবার এই হাটে গিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে কোরবানীর পশু। হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার ছোট গরুর দাম বেশি। সেই তুলনায় বড় গরুর দাম অনেক কম। এতে হতাশা প্রকাশ করছেন বড় গরুর খামারিরা। জেলার তানোর উপজেলার মুন্ডুমালার বিশাল পশুহাটে কোনো ধরনেই স্বাস্থ্যবিধি নেই।
সিটিহাটে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামগঞ্জ থেকে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে গরু। সাধারণ মানুষ কোরবানী দেয়ার জন্য গরু কিনতে এসেছেন। এছাড়াও এসেছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তের ব্যাপারীরাও। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে সিটিহাট।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা থেকে দুটি মাঝারি আকারের গরু নিয়ে এসেছিলেন বাবর আলী। তিনি জানালেন, আড়াই থেকে তিন মণ মাংস হবে তার প্রতিটি গরুর। প্রতিটির দাম চাচ্ছেন ৭৫ হাজার টাকা। ক্রেতারা ৬০ হাজারের বেশি দিতে চাচ্ছেন না। তাই তিনি গরুর রশি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। পবার বড়গাছি থেকে তিনটি গরু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন আনিসুর রহমান। তার গরুর আকার বেশ বড়। আনিসুর প্রতিটির দাম চাচ্ছেন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি দিতে চাচ্ছেন না। কিছুক্ষণ পর আনিসুরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, একটি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি দাম পেয়েছেন এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অন্য দুটি বিক্রি হয়নি।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্যনুযায়ী, রাজশাহীতে এ বছর কোরবানির জন্য চাহিদা হতে পারে ২ লাখ ৭০ হাজার পশু। তবে জেলার ১৪ হাজার ১৯৯টি খামারে গবাদিপশু প্রস্তুত আছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৪টি। গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার। রাজশাহীর ৯টি উপজেলা মধ্যে মোহনপুরে সবচেয়ে বেশি গবাদিপশু পালিত হয়েছে। সংখ্যায় যা ৫৭ হাজার ১১১টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে জেলার পবা উপজেলা। সেখানে পালিত হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৬০টি পশু।
সিটি হাটের ইজারাদারদের আতিকুর রহমান কালু বলেন, পশুহাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সরকারি কিছু নির্দেশনা আছে। সেগুলো আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আমাদের এবং কয়েকটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিনও বসানো হয়েছে।
সিটিহাটের ইজারাদার আরও বলেন, আমরা এখন প্রতিদিনই হাট দিচ্ছি। শনিবার রাজশাহীর বানেশ^রেও হাট বসেছে। শুক্রবার হাট বসেছে মান্দার চৌবাড়িয়া, রাজশাহীর কাঁটাখালী আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বটতলীতে। কালু বলেন, বড় বড় অফিসার আর ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা অনলাইনে গরু কিনছেন। মূলত তাঁরাই হাটে এসে আগে বড় গরু কিনতেন। এবার সেটা হচ্ছে না বলে বড় গরুর দাম কম। আর গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ হাটে ছোট কিংবা মাঝারি আকারের গরু কিনছেন।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, অনলাইনে রাজশাহীর পশু বিক্রি করতে সরকারি উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ১৫টি গ্রুপ ও পেইজ খোলা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে আরও পাঁচটি গ্রুপ ও পেইজ আছে। এ পর্যন্ত সেখান থেকে ২ হাজার ৪৮৪টি পশু বিক্রি হয়েছে। করোনাকালে আমরা আরও ভাল সাড়া প্রত্যাশা করি। তবে শেষ সময়ে এসে অনলাইনে আগ্রহ কমেছে মানুষের। তাই তারা সরাসরি দরদাম করে গুর ছাগল কিনতে হাটে ভীড় জমাচ্ছেন।
আরবিসি/১৯ জুলাই/ রোজি