আরবিসি ডেস্ক : ১২ দিনের রিমাণ্ড ও ১৮ দিন জেলে কাটিয়ে গত মঙ্গলবার জামিনে ছাড়া পান বোট ক্লাব কাণ্ডের প্রধান আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। ছাড়া পাওয়ার চারদিন পর রবিবার তিনি সাংবাদিকদের কাছে বিবৃতি পাঠিয়ে জানালেন, সেই রাতে পরীমনির সঙ্গে আসলে কী ঘটেছিল।
বিবৃতিতে নাসির দাবি করেছেন, সেই রাতে পরীমনি বিদেশি মদ চেয়েছিলেন। না পেয়ে ক্লাবে ভাঙচুর চালান। তাতে বাধা দিলে তিন-চার দিন পর তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মিথ্যাচার করেন।
তার ভাষায়, ‘সম্প্রতি আমাকে নিয়ে প্রচারিত একটি মিথ্যা ঘটনা নিয়ে পরীমনি কর্তৃক যে অপপ্রচার করা হয়েছে, তা আপনারা ইতোমধ্যেই অবগত হয়েছেন। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য সেদিন আসলে কী ঘটেছিল তা আমি বলতে চাই। আমি ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যকরী পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে ক্লাবের ডিসিপ্লিন, মেনটেইনেন্স, কালচারাল অ্যাফেয়ার্স ও এন্টারটেইনমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত।’
সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেদিন রাত আনুমানিক ১২টায় বোট ক্লাবেরই একজন সদস্যের সঙ্গে তিন জন অতিথি ক্লাবের বারে প্রবেশ করেন। আমি তখন অন্য টেবিলে অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসে ছিলাম। আমি দূর থেকে লক্ষ্য করছিলাম তারা মদ্যপ অবস্থায়ই ক্লাবে প্রবেশ করেন।
এ অবস্থায় তারা আমাদের পাশের একটি টেবিলে বসেন এবং ওয়েটারদের ড্রিংকসের বোতল দিতে বলেন। ওয়েটাররা এক বোতল ড্রিংকস টেবিলে সার্ভ করেন, তা অতি দ্রুত তারা শেষ করে ফেলেন এবং আরও এক বোতল ড্রিংকস টেবিলে আনান এবং সেই বোতলের অর্ধেকেরও বেশি শেষ করে ফেলেন।
এ সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরীমনি (যার নাম আমি পরে জেনেছি) একটি দামি তিন লিটারের ‘ব্লুলেবেল’র বোতল বারের সেলফ থেকে নিজ হাতে তুলে নিয়ে টেবিলে আসেন এবং তার সঙ্গে নিতে চান। এ সময় ওয়েটাররা তা নিতে বাধা দিলে পরীমনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওয়েটারদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে টেবিলে রাখা প্লেট-গ্লাস অনবরত ছুঁড়ে ভাঙতে থাকেন।
যেহেতু আমি ক্লাবের ডিসিপ্লিনারি ইনচার্জ, সেহেতু বিষয়টির ব্যাপারে ওয়েটাররা আমার সাহায্য চায়। তখন আমি পরীমনিদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলি এই ড্রিংকসের বোতল বিক্রিযোগ্য নয়। সে সময় পরীমনি আমাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং টেবিলে রাখা প্লেট, গ্লাস ছুঁড়ে মারতে থাকেন। আমি তাকে বারবার অনুরোধ করি, যাতে তিনি এসব থেকে নিবৃত্ত হন।
কিন্তু পরীমনি তা কর্ণপাত না করে তিনি আমাকে লক্ষ্য করে গ্লাস ছুঁড়তে থাকেন এবং এক সময় একটি গ্লাস আমার ঘাড়ে লাগে। পরে আরও গ্লাস ছুঁড়তে চেষ্টা করলে আমি তাকে শান্ত হতে বলি। সেই মুহূর্তে তার সঙ্গে আসা জিমি (পরে নাম জেনেছি) আমার ওপর চড়াও হয়। এ অবস্থায় ক্লাবের বাইরে দায়িত্বরত সিকিউরিটি স্টাফদের ডাকি। কিছুক্ষণ পরেই ক্লাবের সিকিউরিটিরা উপস্থিত হন এবং বলি তাদের ক্লাব থেকে বের করে দাও। এ কথা বলে আমি ক্লাব ত্যাগ করি।
ঘটনার চার-পাঁচ দিন পর পরীমনি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন এবং এর কিছুক্ষণ পর তিনি সংবাদ সম্মলন করেন। সেখানে আমাকে নিয়ে তার মিথ্যাচারে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি।
বিবৃতিতে নাসির আরও বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মহামান্য আদালতের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমি ন্যায় বিচার পাব।’
প্রসঙ্গত, সাভার থানায় পরীমনির করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় মঙ্গলবার (২৯ জুন) আদালত থেকে জামিন পান নাসির উদ্দিন মাহমুদ। পর দিন (বুধবার) বিমানবন্দর থানায় করা মাদক মামলায়ও তিনি জামিন পান। এরপর বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
এর আগে গত ১৩ জুন রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও পরে সংসবাদ সম্মেলন করে চিত্রনায়িকা পরীমনি দাবি করেন, গত ৯ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে যৌন হেনস্তা ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। পরের দিন সকালে তিনি সাভার মডেল থানায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ ছয় জনের নামে মামলা করেন।
ওইদিনই নাসির ও অমি সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি দল। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি মাদক। যার কারণে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মাদক মামলাও করে। ওই দুই মামলায় জামিন পেয়ে নাসির ছাড়া পেলেও এখনো জেলেই রয়েছেন আরেক ব্যবসায়ী তুহিন সিদ্দিকী অমি।
আরবিসি/০৬ জুলাই/ রোজি