• শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ অপরাহ্ন

বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় ডেকে আনছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

Reporter Name / ৯৮ Time View
Update : সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : ভারত হয়তো আপাতত সংক্রমণের সর্বোচ্চ চূড়া অতিক্রম করেছে, কিন্তু সেদেশে প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টটি বাংলাদেশসহ এশিয়া এবং বিশ্বের বহু দেশকে বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে।

শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক ড. ট্রেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, কমপক্ষে ৯৮টি দেশে ভারতে প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে।

ড. গেব্রেইয়েসুস বলেন, ‘ভ্যারিয়েন্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটির কাঠামোগত এবং চারিত্রিক রূপান্তর ঘটে চলেছে। নতুন এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যেসব দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম ভালো হয়েছে সেখানেও ছড়াচ্ছে।
ব্রিটেনে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে তার প্রধান কারণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু অক্সফোর্ডে রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক জেমস নেইস্মিথকে উদ্ধৃত করে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা বলছে, পুরো ইউরোপজুড়ে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়বে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিণতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওই বিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল বিশ্বে এতো কম মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে যে তাদের সামনে চরম বিপদ অপেক্ষা করছে। ডেল্টা যখন ব্যাপকভাবে ছড়াতে শুরু করবে, দ্রুত ওই সব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিপর্যয় তৈরি হবে, যদি না দ্রুত টিকা কর্মসূচির প্রসার না হয়।

তিনি বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে, অক্সিজেনের অভাব দেখা দেবে এবং ডাক্তার নার্সরা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকহারে টিকা কর্মসূচি অব্যাহত থাকলেও ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সেদেশেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোকে, বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশীদের।

যেখানে বাড়ছে সংক্রমণ
ভারতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও সেদেশে প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশে বিপজ্জনক মাত্রায় নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ এবং মৃত্যু।

আর এই বিপদ এমন সময় হাজির হয়েছে যখন ওই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশেই টিকা কর্মসূচির পরিস্থিতি নাজুক। মে মাসেই নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় নেপালে। মে মাস থেকে সেদেশে এত দ্রুতহারে সংক্রমণ বাড়তে থাকে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ চরমে পৌঁছে।

জুন মাসে আফগানিস্তানে সংক্রমণের সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হয়ে পড়ে। সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়াজিদ মজরুহ বলেন, সারাদেশে যতো সংক্রমণ হচ্ছে তার ৬০ শতাংশই হচ্ছে রাজধানী কাবুলে। তিনি বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এই অবস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মঙ্গোলিয়াতে সংক্রমণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত। সেই বাংলাদেশে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।

সরকারি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মে মাসের ২৫ তারিখ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় যতজন কোভিড পজিটিভি রোগী পাওয়া গেছে, তাদের ৬৮ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিল।

সংক্রমণ সামাল দিতে বাংলাদেশে এখন দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন চলছে।

ইন্দোনেশিয়া
সংক্রমণ বাড়ায় ইন্দোনেশিয়ার বেশকিছু অঞ্চলে ২০ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউন জারি রয়েছে। সেদেশের সরকার জানিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণেই এই পরিস্থিতি। ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, গত তিন সপ্তাহে যতজন কোভিড পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে তাদের ৬০ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে।

রেডক্রস বলছে, হাসপাতালের বেড এবং অক্সিজেনের অভাব যেভাবে প্রকট হচ্ছে তাতে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ইন্দোনেশিয়া।

থাইল্যান্ড
থাই সরকার বলছে, সেদেশে সম্প্রতি যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তার অন্যতম প্রধান কারণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। রাজধানী ব্যাংকক ছাড়াও ফুকেতের মত কিছু দ্বীপেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।

মঙ্গোলিয়া
চীন থেকে পাওয়া সিনোফার্ম টিকার বদৌলতে মঙ্গোলিয়া টিকা কর্মসূচিতে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষ সেদেশে টিকা নিয়ে ফেলেছে।

কিন্তু তারপরও সম্প্রতি যেভাবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বাড়ছে তাতে জনসংখ্যার শতকরা হারে এশিয়ায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশগুলোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে।

আরবিসি/০৫ জুলাই/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category