• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন

করোনার হটস্পট ‘খুলনা’

Reporter Name / ৭৮ Time View
Update : শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : খুলনা এখন করোনাভাইরাসের ‘হটস্পট’। প্রতিদিনই মৃত্যু এবং সংক্রমণে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সারা দেশের মধ্যে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৯জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। হাসপাতালে বেড এবং অক্সিজেনের জন্য চলছে রোগী ও স্বজনদের হাহাকার।

এদিকে, বেড সংকট কাটাতে আরও ১১৫ শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে খুলনার স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ শয্যার করোনার নতুন ইউনিট এবং খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালিত ১৩০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ৭০ শয্যা বাড়িয়ে ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে।

অপরদিকে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন বাস্তবায়নে খুলনা মহানগরীর পাশাপাশি উপজেলাগুলোতে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসিল্যান্ডদের নেতৃত্বে, পুলিশ, আনসার, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মৃত্যু এবং সংক্রমণে একের পর এক রেকর্ড :

পেছনের সব রেকর্ড ভেঙে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগের ৯ জেলায় করোনায় সর্বোচ্চ ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে এটিই বিভাগে একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যৃ। মৃত্যুতে খুলনা জেলা শীর্ষ অবস্থানে। এর আগে ২৯ জুন দশ জেলায় সর্বোচ্চ ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০৯ জনে। এ সময় ১০ জেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৪৫ জন। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৫৭ হাজার ৫২০ জন।

অ্যাম্বুলেন্সে রোগী রেখে বেডের জন্য অপেক্ষা :

খুলনা মহানরগী ও জেলায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা এবং মৃত্যু বৃদ্ধির কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীর জন্য সিট মিলছে না আইসিইউতে। নগরীর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা সাধারণ শয্যায় ভর্তির জন্য হাসপাতালের গেটে রোগী নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে স্বজনদের। ইতোমধ্যে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন সিলিন্ডার চেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। পাশাপাশি নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি জনবলও চাওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নগরীর জেনারেল হাসপাতালে ৭০ শয্যা করোনা ইউনিটে সকাল ৯টায় করোনার রোগী গৃহবধূ খাদিজাকে নিয়ে মোল্লাহাট থেকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন স্বজনরা। করোনায় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেনও ফুরিয়ে যায়। তার স্বামী সাফায়াত শরীফ ছোটাছুটি করছিলেন স্ত্রীকে ভর্তি করার জন্য। খুলনার এসময়ের চিত্র এরকমই। হাসপাতালে রোগীদের জন্য খালি সিট নেই।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শনিবার (৩ জুলাই) থেকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ শয্যাসহ মোট ৪৫ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। করোনা হাসপাতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও ৭০টি শয্যা। এতে করে রোগীদের আরও ভালোভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

বাড়ছে করোনার আরও ১১৫ শয্যা :

রোগীর চাপ সামলাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। তবুও রোগীর সংখ্যা বেশিই থাকছে। ফলে খুলনা খুলনার আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ শয্যার করোনার নতুন ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালিত ১৩০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। এখানেও বাড়ছে ৭০ শয্যা। সবমিলিয়ে খুলনার দু’টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বাড়ছে আরও ১১৫ শয্যা।

আবু নাসের হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: এস, এম, মোর্শেদ জানান, শনিবার থেকেই আইসিইউ’র ১০টিসহ মোট ৪৫টি বেডে শুধুমাত্র করোনা পজেটিভ রোগীদেরই ভর্তি করা হবে। আপাতত যে জনবল আছে তা দিয়েই যাত্রা শুরু হবে। তবে আরও কিছু জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় ২০জন ডাক্তার, ৫০জন নার্স এবং ৫০জন আউটসোর্সিং কর্মচারী চাওয়া হয়েছে।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্কট বাড়ছে :

করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্কটও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফলে সময়মতো অক্সিজেন না পেয়ে অনেকে মারা যাচ্ছেন বলে স্বজনরা অভিযোগ করছেন। আর এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার কে আগে নেবে, তা নিয়ে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাড়াকাড়ি চলে রোগীদের স্বজনদের মধ্যে। এমনই চিত্র খুলনার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে।

খুলনার সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত হাসপাতালে ১৩০ শয্যার বিপরীতে গত কয়েকদিন যাবত রোগী ভর্তি থাকছেন ১৮০ থেকে ১৯০ জন। এখানে মাত্র ৭৭ টি শয্যায় রয়েছে কেন্দ্রিয় অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যবস্থা, বাকি রোগীদের ভরসা সিলিন্ডার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ শ’ সিলিন্ডার মজুদের কথা বললেও হাহাকার থামছে না। রোগীর এক স্বজন জানান, অক্সিজেনের সিলিন্ডার আমি নিজে ঘুরিয়ে আমার রোগীর পাশে রাখি। একটু পর এসে দেখি সেটা আরেকজন নিয়ে গেছে। আমাদের মতো যারা নরমাল পেসেন্ট তারা সিলিন্ডার পাচ্ছে না। আরেক করোনা রোগীর ভাই জানান, সিলিন্ডার না পেয়ে আমরা এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতিছি। শুধু অক্সিজেনের অভাবে আমার বোন মারা যাচ্ছে।

করোনা প্রতিরোধ ও সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য ও মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ জানান, রোগীর এমন চাপ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রোগীর সংখ্যা যখনই ১৭০ অতিক্রম করছে তখনই সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

আরবিসি/০২ জুলাই/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category