সময়ের হিসেবে ৩৬৫ দিন। আজ এক বছর হলো তিনি নেই। কিন্তু হৃদয়ে জাগ্রত রয়েছেন প্রতিটি দিন প্রতিটি ক্ষণ। বলছি মাসুম ভাইয়ের কথা। সবাই মাসুম ভাই হিসেবেই তাকে চিনতেন। পুরো নাম মো. তবিবুর রহমান। আজ ২৮ জুন তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের এইদিন তিনি সবাইকে কাদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। অনেকই আজ তাকে ভুলে গেছেন। কেউ কেউ ভুলতে বসেছেন। তবে তাঁর জীবদ্দসায় সখ্যতার কারণে ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছিলাম। দেখতে দেখতে একটি বছর পেরিয়ে গেলো। এখনো মনে হয় মাসুম ভাই রয়েছেন। কখনো মনে হয় না তিনি নেই।
আজ থেকে ২৬ বছর আগে ১৯৯৫ সালের কোন এক সময়ে স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদে কাজ করার সুবাদে তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়। সে সময় তার সঙ্গে আরেকজন ছিলেন। তিনি মুঈদ। মুলত মুঈদ আর মাসুম ভাই ছিলেন রাজশাহীর ক্রীড় সাংবাদিক। এরমধ্যে মাসুম ভাই ছিলেন একটু আলাদা। শুধু ক্রীড়া সাংবাদিকতায় তিনি সীমাবদ্ধ না রেখে সাধারণ সাংবাদিকতাতেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে গেছেন। শেষ সময়ে তিনি ছিলেন দৈনিক সোনালী সংবাদের প্রধান প্রতিবেদক।
মাসুম ভাই নিয়মিত কাজ করতেন যার কারণে সুন্দর একটি সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। বয়সের ব্যবধান সম্পর্কে কখনও বাধা হতে পারেনি। সদা হাসিখুশি মাসুম ভাই অভিমানী ছিলেন কিন্তু কখনও কারো সাথে রুঢ় আচরণ করতেন না। সবার সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন।
১৯৯৭ সালে ক্রীড়া লেখক সমিতির নির্বাচনে মাসুম ভাইয়ের সাথে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। তখন তিনি রাজশাহী জেলা ক্রীড়া লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর সভাপতি ছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক মোলাজ্জেম হোসেন সাচ্চু ভাই। সাচ্চুভাই সেবার ঢাকা না যাওয়াতে আমার যাবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন মাসুম ভাই। সেখানেও দিখেছি ঢাকার ক্রীড়া সাংবাদিকদের সাথে মাসুম ভাইয়ের মধুর সখ্যতা। ঢাকার ক্রীড়া সাংবাদিকরা মাসুম ভাইকে গুরুত্ব দিতেন। ঢাকার বাইরে রাজশাহী জেলা ক্রীড়া লেখক সমিতি বেশ সক্রিয় ছিল। নিয়মিত আলোচনা, সভা, সেমিনার হত। ক্রীড়া লেখকদের উৎসাহ দিতেন। রাজশাহীর ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে লেখালেখি করতেন। মাসুম ভাই ক্রীড়া লেখক সমিতিকে নিজের মত করে আগলে রাখতেন। খুবই দৃঢ়তার সাথে মাসুম ভাই সংগঠনটিকে সক্রিয় রেখে ছিলেন। পরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
প্রতি বছরের ২ জুলাই তিনি রাজশাহীতে পালন করতেন বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিকতা দিবস। ২০১৯ সালে শেষ বারের মত আমরা এই দিনটি পালন করেছিলাম। মাসুম ভাই ওই সময় অসুস্থ ছিলেন তাই তার দরগাপাড়ার ভাড়া বাসাতে জড়ো হয়েছিলাম আমরা। সেখানে ছিলেন, সাংবাদিক মোলাজ্জেম হোসেন সাচ্চু ও আনোয়ারুল আলম ফটিকসহ সমিতির অন্যান্য সদস্যরা। এদের মধ্যে সাংবাদিক মোলাজ্জেম হোসেন সাচ্চু ও আনোয়ারুল আলম ফটিকও চলে গেছেন।
মাসুম ভাই রাজশাহীতে ক্রীড়া সাংবাদিকতায় নতুন ধারা তৈরী করেছিলেন। এসএ গেমস, এশিয়ান গেমসসহ দেশের বাইরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খেলাধুলার সচিত্র প্রতিবেদন তৈরীর জন্য বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। রাজশাহী থেকে ক্রীড়া সাংবাদিকদের জন্য যা ছিল বিশাল এক চালেঞ্জ। খেলাধুলার প্রতি মাসুম ভাইয়ের ভালবাসা ও অনুরাগ থেকে তিনি সফলতা পেয়েছেন। খেলাধুলা মাসুম ভাইকে বেশী টানতো কিন্তু মাসুম ভাইয়ের সাংবাদিকতা জীবন শুধু খেলাধুলার মধ্যেই সীমিত ছিল না। দেশ ও সমাজের সংবাদ মাসুম ভাইয়ের লেখনিতে ফুটে উঠেছে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি মাসুম ভাই বঙ্গবন্ধু কলেজে শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এবং রাজশাহী বেতারে সংবাদ পাঠ এবং খেলাধুলার সংবাদসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতেন। মাসুম ভাই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে নিজের সাধ্যমত কাজ করে গেছেন।
মাসুম ভাইয়ের মৃত্যুর কারনে গত বছর রাজশাহীতে বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিকতা দিবস পালন করা হয়নি। এ বছর হবে কিনা তাও জানা নেই। মাসুম ভাই না থাকায় স্থবির এখন জেলা ক্রীড়া লেখক সমিতি।
আজ প্রিয় মাসুম ভাই নেই। তবে তার রেখ যাওয়া কাজ জাগ্রত হয়ে আছেন আমাদের মাঝে। গত বছরের ২৭ জুন সন্ধ্যায় মাসুম ভাইয়ের সাথে শেষ দেখা হয়। সেদিন তার জন্য ওষুধ দিতে গিয়েছিলাম। মাসুম ভাই তখন ঘরের খাটে বসে ছিলেন। আমাকে বসতে বললেও ব্যস্ততা থাকায় কাল আসবো বলে চলে আসি। পরের দিনও গিয়েছিলাম। কিন্ত সেই যাওয়াটা ছিল কষ্টের বড্ড কষ্টের। সেদিনই মাসুম ভাই চলে যান পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। আমাদের কাদিয়ে।
এদিকে স্মরণে সোমবার বিকেলে রাজশাহী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সংক্ষিপ্ত আকারে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন রাজশাহী প্রেসক্লাব ও জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ সভাপতি সাইদুর রহমান।
আরবিসি/২৮ জুন/ রোজি