• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন

যাত্রীবাহী সব পরিবহন বন্ধের সুপারিশ

Reporter Name / ৯৩ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : করোনায় কোণঠাসা দেশ। এর বিস্তার রোধে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল। কিন্তু চিকিৎসা, জীবিকা ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও অপ্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ঢুকছে মানুষ। একইভাবে ঢাকা ছাড়ছে অনেকে। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র গণপরিবহন চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপরিবহন হিসেবে শুধু বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু যাত্রী পরিবহনের অন্যান্য বাহন চলছে। বন্ধ রাখলে সব ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ রাখতে হবে। ভেঙে ভেঙে যাত্রীদের চলাচলও বন্ধ করে দিতে হবে। এছাড়া ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে তল্লাশি জোরদার করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও কোভিড–১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকল্প উপায় না থাকায় ঢাকার আশপাশের জেলাসহ সাত জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে। সারাদেশের সঙ্গে ঢাকার বাস, ট্রেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু অন্য জেলা থেকে ঢাকায় বা ঢাকা থেকে অন্য জেলায় মানুষের চলাচল বন্ধ হয়নি। এতে মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তবে খানিকটা ফল পাওয়া যাবে।

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, সদস্য, কোভিড–১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তিনি বলেন, সীমান্ত থেকে ঢাকামুখী সংক্রমণ ছড়াতে হয়তো সময় লাগছে। কিন্তু ঢাকায় সংক্রমণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে কার্যপ্রণালী সঠিক করতে হবে, না হলে সুফল পাওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী অনেক নির্দেশনা দেন, কিন্তু সেগুলো প্রতিপালন হয় না। কারণ, যারা বাস্তবায়ন করবেন তাদের মধ্যে ভাবনা, দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে গত এক সপ্তাহে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১১৪.৪ শতাংশ সংক্রমণ বেড়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ। সেখানে সংক্রমণ বেড়েছে ৮৬.৭ শতাংশ।
সংস্থাটির তথ্য মতে, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। লকডাউনে থাকা জেলাগুলো থেকে বাসসহ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও বেশির ভাগ জেলায় গণপরিবহন বন্ধ করা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখন আমাদের খুব কঠিন অবস্থানে যেতে হবে। আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের চলাচল থেমে নেই। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষজন ঢাকায় আসছে। বিকল্প যানে এ চলাচল বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। বিকল্প গণপরিবহনও বন্ধ করতে হবে। রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণ বাড়ছে বলে এখানেও গণপরিবহন বন্ধ করতে হবে। এটি বন্ধের পর মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে সংক্রমণের হার কমানো যেতে পারে।
আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সন্ধ্যার পর রেস্তোরাঁ, শপিং মল, চায়ের দোকানসহ জনসমাগম হয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হবে। দরকার হলে অফিস-আদালত সীমিতভাবে খোলা রাখা যায়। গণপরিবহনের শ্রমিকরা মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিবহন মালিকদের জরিমানা করার দরকার ছিল। কিন্তু সেটা করা যায়নি।

এদিকে, সব ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন পরিবহন নেতারাও। তারা বলছেন, দেশের সব জায়গায় যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার সময় এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মোটা দাগে ঢাকার সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারের মতো যানবাহনে ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নেমে শহরে ঢুকছে অধিকাংশ মানুষ। যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে, আর চালকরা পুলিশকে চাঁদা দিয়ে চলাচল করছে। এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কি ঠেকানো যাবে?

‘পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া সব ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ করতে হবে। গণপরিবহনের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না এমন যানবাহনেও যাত্রী চলাচল বন্ধ করতে হবে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বিষয়টি তোলা হয়েছে। আমি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। মহাসড়ক পুলিশের কাছে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বিভিন্ন জেলায় যে মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিকশায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে তার উদাহরণও তুলে ধরেছি।’

দেশে একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ফের ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও আশির ওপরে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ছয় হাজার ৫৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের।

একদিনে শনাক্ত রোগীর এ সংখ্যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১২ এপ্রিল একদিনে সাত হাজার ২০১ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল। গত একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা সামান্য কমলেও নতুন রোগী বেড়েছে সোয়া তিনশর বেশি। বুধবার দেশে পাঁচ হাজার ৭২৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর, মৃত্যু হয়েছিল ৮৫ জনের।

শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে ১৫৭২ জনই ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে গত একদিনে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

আরবিসি/২৪ জুন/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category