রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের দেয়া ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের একাংশের বাধার মুখে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা তার বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সভা স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এসময় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য বলেন, গত সোমবার চাকরিপ্রাপ্তদের সঙ্গে আমাদের আলোচনাসভা হয়েছে। সভায় তারা আমাদের বলেছিলেন সিন্ডিকেট সভাতে তারা বাধা দেবে না, তবে এফসি করতে দিবে না। তাদের আশ্বাসে আজকে সন্ধা ৭ টার পর সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়। কিন্তু সিন্ডিকেট করতে গেলে তারা বাধা প্রদান করে এবং প্রক্টরসহ সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়। তাই আজকের সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করছি।
‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের দাবির বিষয়ে ভিসি বলেন, ‘এবিষয়ে আমার একার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি আছে, বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখছেন। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া তাদের যোগদান করানোর ক্ষমতা আমার নেই।’
তবে নিয়োগপ্রাপ্তরা বলছেন, তাদের স্ব স্ব পদে যোগদানের আদেশ না দেয়া পর্যন্ত তারা বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সভা অনুষ্ঠিত হতে দিবে না।
এদিকে গত সোমবার দুপুরে স্থানীয় সাংসদ আয়েন উদ্দিন ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তিন ঘণ্টাব্যপী নিয়োগপ্রাপ্তদের আলোচনাসভা হয়। সভা শেষে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একাডেমিক কাজে তারা বাধা প্রদান করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান সুমন বলেন, ‘গত সোমবারের আলোচনা সভায় আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল আমাদের বিষয়ে শীঘ্রই সমাধান হবে। কিন্তু এরপরেই প্রশাসন থেকে আমাদের পদায়নের বিরোধিতা করা হয়েছে। এবং আমরা জানতে পেরেছি, আজকের সিন্ডিকেটে আমাদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিলের বিষয়ে কথা বলা হতো। তাই আমরা ভিসি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের আশ্বাসে নিয়োগপ্রাপ্তদের আরেক অংশ আবার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন নি। তারা বলছেন আমাদের নেতৃবৃন্দরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তাদের সিদ্ধান্তের উপর অটল রয়েছি।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে আবদুস সোবহান উপাচার্য হিসেবে শেষ কর্মদিবসে (৬ মে) ১৩৭ জনকে অ্যাডহকে (অস্থায়ী) নিয়োগ দিয়ে পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সেদিন এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে সেদিনই বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদান স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মন্ত্রণাণলয়ের তদন্ত কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করে গত ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। শেষে অবৈধ নিয়োগে তদন্ত কমিটি বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। আবদুস সোবহানের দেশ ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যেই নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগদানের জন্য ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন।
আরবিসি/২২ জুন/ রোজি