• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন

উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সংক্রমণ-মৃত্যু

Reporter Name / ৮৮ Time View
Update : সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : দেশের আট বিভাগেই করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো দেশে ধারাবাহিকভাবে চার সপ্তাহ করোনার সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে গণ্য হয়। কিন্তু বর্তমানে সারাদেশে করোনার সংক্রমণ সর্বনিম্ন তিন থেকে আটগুণ বেশি। সার্বিকভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ১৯ শতাংশেরও বেশি।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে রাজধানী ঢাকা তথা ঢাকা বিভাগ ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এই দুই বিভাগের মধ্যেই করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু গত দুই মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু অন্যান্য বিভাগেও ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নেয়ার পর এসব জেলায় মৃত্যুও বাড়ছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির পেছনে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করা হচ্ছে।

করোনার ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আগামীকাল ২২ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ সাত জেলায় লকডাউন জারি করেছে।

লকডাউন চলাকালে সার্বিক চলাচল (জনসাধারণের চলাচলসহ) সকাল ৬টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ সময় শুধু আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৮ জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৩ জন, চট্টগ্রামে ১১ জন, রাজশাহীতে ১৫ জন, খুলনায় ১৪ জন, বরিশালে তিনজন, সিলেটে দুইজন, রংপুরে নয়জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬২৬ জনে।

একই সময়ে সরকারি ও বেসরকারি ৫২৮টি ল্যাবরেটরিতে ২৪ হাজার ৫০৯টি নমুনা সংগ্রহ এবং ২৪ হাজার ৫৭টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ৬৩৬ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৫৬ হাজার ৩০৪ জন।

২৪ ঘণ্টায় শনাক্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২ হাজার ৯৮৯টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৮৩৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭৫৭টি নমুনায় ১৪৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে দুই হাজার ৭৩২টি নমুনায় ৪৬১ জন, রাজশাহী বিভাগে তিন হাজার ৩০৪টি নমুনায় ৭৯৯ জন, রংপুর বিভাগে ৬৬০টি নমুনায় ২৫৭ জন, খুলনা বিভাগে দুই হাজার ৩৬০টি নমুনায় ৯৪৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৬৭১টি নমুনায় ১১৭ জন এবং সিলেট বিভাগে ৫৮৪টি নমুনায় ৭৭ জন শনাক্ত হয়েছে।

বিভাগওয়ারি আক্রান্তের হারের দিক দিয়ে ঢাকা বিভাগে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৪০ দশমিক শূন্য চার শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়। সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয় খুলনা ও রংপুর বিভাগে যথাক্রমে ৪০ ও ৩৮ শতাংশেরও বেশি।

করোনার সংক্রমণ রোধে দেশে ছয়টি টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। টিকাগুলোর মধ্যে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাসট্রেজেনেকার টিকা গত জানুয়ারি মাসে শুরু হয়। মজুত শেষ হওয়ায় ২৫ এপ্রিল থেকে এ টিকার প্রথম ডোজের টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ করা হয়। সম্প্রতি চীনের সিনোফার্ম এবং আজ (২১ জুন) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকাদান শুরু হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও রোগতত্ত্ববিদদের মতে, একটি দেশের ৮০ শতাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনা গেলে করোনার সংক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কারণ অধিকাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসলে মানুষের শরীর করোনা প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু ১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এ দেশে টিকা দেয়ার হার খুবই নগণ্য।

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বৃদ্ধিতে অস্বস্তিতে রয়েছে স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণ ও মৃত্যুর এ ধারা অব্যাহত থাকলে হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয় এমন রোগীদের চাপ বাড়বে। এতে ভেঙে পড়তে পারে চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এবং আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। টিকাদান কার্যক্রমের শুরুটা ভাল হলেও পরবর্তীতে টিকার মজুত ফুরিয়ে আসায় তা ব্যাহত হয়। তারা যখনই টিকা পাচ্ছেন বা পাবেন তখনই টিকা দিচ্ছেন এবং দেবেন। এরপরও দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে এক সময় হাসপাতালে রোগীর ধারণক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে। উন্নত বিশ্বের বহু দেশে এমনটি দেখা গেছে। ফলে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে হাসপাতালে চাপ কমবে। প্রায় দেড় বছর ধরে তারা একই কথা বলে আসছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আরবিসি/২১ জুন/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category