• শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

রামেক হাসপাতাল ঘিরে দালালচক্রের অপতৎপরতা

Reporter Name / ১১৯ Time View
Update : শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর মোড়ে অবস্থিত এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার জন্য উত্তরবঙ্গ তথা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ আসেন। স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসার আশায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এসব মানুষের চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় অসাধু দালালচক্র।

হাসপাতালে ঢুকলেই চোখে পড়ে নিরক্ষর সেবাপ্রার্থীরা টিকিটের স্লিপটি নিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, এত নম্বর রুমটা কোন দিকে? প্যাথলজি টেস্ট কোথায় করা হয়? এমন নানান প্রশ্ন। আর এমন প্রশ্ন যারা করেন, তাদের অধিকাংশই নিজের অজান্তেই দালালের খপ্পরে পড়ে যান। শেষে রামেক হাসপাতাল সম্পর্কে বিরূপ ধারণা নিয়েই বাড়ি ফেরেন।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও নিষ্ক্রিয় ছিলো না এ দালালচক্র। কৌশল বদলে চালিয়ে গেছে অপতৎপরতা। এরই প্রেক্ষিতে দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। এ সময় পুলিশ সদস্যেকেও হুমকি দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এরপরেও থেমে নেই দালালচক্র।

সমুদ্র সৈকতের সেই কাঁকড়ার মতই যেন চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপতৎপরতা। কাঁকড়া যেমন সৈকতে মানুষ দেখলে লুকিয়ে পড়ে, দালালচক্রও অভিযান চলাকালীন সময় লুকিয়ে থাকে। দালাল নির্মূল অভিযান চলার সময় আত্মগোপনে যায় এ চক্র। ধরাও খায় অনেকেই। তবে পরিস্থিতি শান্ত হলেই আবারও হাসপাতাল দাঁপিয়ে বেড়ায় তারা।

জানা যায়, রামেক হাসপাতালের আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোই এসব দালাল পোষে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্ধনে স্থায়ী সমাধান না মেলায় দালালমুক্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রোগিরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) রামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগের সামনে নারীসহ একাধিক দালাল অবস্থান নিয়েছে। করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই বহির্বিভাগের পুরো এলাকা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। বহির্বিভাগের বাইরে ফ্লু কর্নারসহ ওয়ার্ডগুলোর সামনে রোগি ও তার স্বজনরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্র দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কয়েকজন। অথচ রোগিদের এমন বিড়ম্বনায় নিরব দর্শকের ভূমিকায় কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা।

দুপুরে বহির্বিভাগ থেকে বেরিয়ে আসছিলেন ইতি বেগম দম্পতি। তাদের হাতে একটি বড় ব্যাগ ও রোগিকে দেখে পথ আটকায় এক নারী দালাল। রামেকে চিকিৎসা হয় না-হাসপাতাল সম্পর্কে এমন আরো অনেক নেতিবাচক ধারণা দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে ৩০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা করিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। তবে সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে দ্রুতগতিতে হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করেন এ দম্পতি।
ইতি বেগম জানান, তার স্বামী অসুস্থ। ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছে। হয়তো টেস্টগুলো দেখে তার স্বামীকে মেডিকেলে ভর্তি করা হবে। এ কারণেই বহির্বিভাগ থেকে বেরিয়ে আসলে ওই নারী দালাল তাদের পথ আটকান, এবং বাইরে চিকিৎসা করানোর জন্যে বলেন।
রামেক হাসপাতলের এমন চিত্র রোগিসহ সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুললেও তার স্থায়ী সমাধান কেন হয় না? এমন প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রামেক হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে হলে মূল কারণগুলো উদঘাটন করতে হবে। যেমন, রামেক হাসপাতালের যে পরিমাণ রোগিকে সেবা দেয়া হয় তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপায়-উপকরণসহ লোকবল আছে কী না? তা দেখতে হবে। যদি না থাকে সেগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে। দালালদের মদদদাতা হিসেবে বেসরকারি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক যেমন আছেন, তেমনি রামেকের কিছু অসাধু ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত থাকেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

তাঁরা আরো জানান, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের মাঝে যারা পড়াশোনা জানে না তারাই বেশি দালালদের খপ্পরে পড়ছেন। সুতরাং হাসপাতালের সেবাকে কীভাবে আরো জনবান্ধব ও সহজ করে দরিদ্র মানুষের সেবা উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। সর্বোপরি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হাসপাতাল দালালমুক্ত করতে হবে। এছাড়া রামেক হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা আছে সেটাও তুলে নিতে হবে।

রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় (রাবি) সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রামেক হাসপাতালের দালালের দৌরাত্মের খবর বরাবরই শোনা যায়। প্রশাসনের অভিযানও চলে। এ অভিযান কিছু সময়ের জন্য কার্যকরি হলেও দীর্ঘস্থায়ী ফল দেয় না। এক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধানের জন্য স্থানীয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি আরো জানান, একটা সময় পর পর যেহেতু দালালদের অপতৎপরতা বাড়ছে সুতরাং সেখানে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন এমন কিছু যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়ে দালাল নির্মূলে কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মেডিকেলে দালাল নির্মূলে তারা তৎপর রয়েছেন। এখন এটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে রামেক হাসপাতাল চত্বরে কোনো দালাল নেই। যা আছে সেটা হাসপাতালের বাইরে। আর হাসপাতালের কিছু টেস্টের ক্ষেত্রে সীমাবন্ধতা আছে। যেটা সামনে আর থাকবে না। তখন দালাল আর থাকবে না।

আরবিসি/১৯ জুন/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category