স্টাফ রিপোর্টার : করোনা আর লকডাউনের কারণে এমনিতেই রাজশাহী অঞ্চলের নিম্ন মানুষের ত্রাহি অবস্থা, এরমধ্যে এনজিওদের ‘কিস্তির খড়গ’ চিন্তায় ফেলেছে তাদের। প্রতিদিন সংক্রমিত হচ্ছে শতশত মানুষ। মারাও যাচ্ছে দিনে গড়ে ১০ জনের বেশী। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন রাজশাহী নগরে লকডাউন শুরু করেছে।
প্রশাসন তাদের দায়িত্ব অনেক গুরুত্ব দিয়েই পালন করে আসছে যা সচেতন মানুষ খুব ভালোভাবেই নিয়েছেন। ওষুধের দোকান ছাড়া আর কোন প্রকার দোকান খুলতে দেওয়া হচ্ছে না। চলতে দেওয়া হচ্ছে না রিকশা পর্যন্ত। এতে করে ব্যবসায়ী ও খেটে খাওয়া মানুষের সকল প্রকার আয়ের উৎস গেছে বন্ধ হয়ে। কিন্তু থেমে নেই এনজিও’র কিস্তি আদায় ক্যাম্প।
লকডাউন ঘোষণার পর থেকে সব বন্ধ থাকলেও এনজিও তাদের কিস্তি তোলার কাজটি বন্ধ করে নি। রুটিন করেই হানা দিচ্ছে ঋণ গ্রহিতার বাসা কিংবা প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রহিতাকে ফোন দিয়ে হাজির হচ্ছেন বাড়িতে। ঋণ উত্তলনের ক্ষেত্রে কোন কথাই তারা শুনতে রাজি না। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতেই হবে তা না হলে তারা তাদের মত ব্যবস্থা নেবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন।
অনেক অনুরোধের পরও আদায়কারীরা গ্রহিতাদের বাসার সামনে গিয়ে নিয়মিত অপমান করে টাকা পরিশোধে বাধ্য করছে। গ্রহিতারাও কোন উপায় না দেখে অন্য কারো কাছ থেকে টাকা ধার করে তাদের দিচ্ছেন। মহামারিকালে আদায়কারীদের এমন আচরণকে চরম বর্বরতা বলে অনেকে আখ্যা দিয়েছেন।
রাজশাহী নগরীর চকপাড়া এলাকার নেগার বানু গত ৫ মাস আগে ‘পদক্ষেপ’ নামের এক এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেন। তার এক ভাইকে সেই টাকা বিনিয়োগের জন্য দেন। লকডাউনের আগ পর্যন্ত সকল কিস্তি সময়মত পরিশোধ করতে থাকেন তার ভাই। কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ছাড়ছেন না এনজিও। নেগারবানু জানান, কঠোর লকডাউনেও কিস্তি পরিশোধের চাপে এখন তিনি দিশেহারা। তিনি বলেন, লকডাউনে ভাই তো দোকান খুলতে পারছেন না। দোকান খুলতে না পারলে কেমন করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবে? তাদের হাজার বলেও কোন কাজ হচ্ছে না। তাদের একটাই কথা কিস্তির টাকা পরিশোধ করতেই হবে।
রাজশাহী নগরীর ভদ্রা, জামালপুর এলাকার শবনম জানান, তার একটি ইলেকট্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানের নামে আরআরএফ এবং টিএমএসএস এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া আছে। তিনি সময়মত কিস্তি পরিশোধ করেও আসছিলেন। কিন্তু কঠোর লকডাউনের পর তিনি তার প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছেন না। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও আদায়কারীদের ফোনে প্রতিনিয়ত বাসায় হানা দিচ্ছে। মানসম্মানের ভয়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা ধার করে তাদের বিদায় করেন। শবনম বলেন, ‘আমি আরআরএফ থেকে প্রায় চার বছর ধরে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করি। এক বছর মেয়াদী ঋণগুলোতে আমার কোন কিস্তি অনাদায়ী নাই। কিন্তু এ একটি কিস্তি না দিতে পারায় তারা বাসায় এসে হাজির হয়েছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কঠোর লকডাউনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনিতেই বন্ধ। নিজেদের চলার টাকা পর্যন্ত নাই। আর ওপর কিস্তির টাকা পরিশোধ যেন ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা।’ হয়ে উঠেছে।
নগরীতে খোঁজ নিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। সবার কথা আমরা খেয়ে বাচবো না মান সম্মান বাচাবো। কিস্তির টাকা আদায়ে আসা আদায়কারীরা কারো কোন অনুরোধ শুনতে রাজি নন। রীতিমত এলাকার মানুষের সামনে হুমকি-ধামকিও দিচ্ছেন।
কিস্তি আদায়ের বিষয়ে আরআরএফ’র আদায়কারী অমিত সাহা ও টিএমএস’র আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমাদের কিছু করার নাই। আমাদের অফিস তো বন্ধ নাই। অফিস থেকে আমাদের চাপ দিচ্ছে, তাই আমাদের গ্রাহকদের কাছ ছুটতে হচ্ছে।
আরবিসি/১৫ জুন/ রোজি