• শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

সব অভিযোগেরই তদন্ত করবে তো বিসিবি?

Reporter Name / ১২৪ Time View
Update : সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : সুজন মাহমুদের নামটা মনে রাখার তেমন কোনো কারণ নেই। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের অখ্যাত এক খেলোয়াড়। তবে একটু পেছন ফিরে যদি তাকান, মনে পড়লেও পড়তে পারে, ২০১৭ সালে পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের অভিনব এক প্রতিবাদ করে ১০ বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন লালমাটিয়া ক্লাবের এই ক্রিকেটার।

আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এক্সিওম ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ম্যাচে সেদিন ইচ্ছা করে ওয়াইড বল করে এক ওভারে ৯২ রান দিয়েছিলেন সুজন। বিসিবি এখনো তাঁর শাস্তি প্রত্যাহার করেনি বা কমায়নি। তবে শোনা যাচ্ছে, সুজন সম্প্রতি শাস্তি মওকুফের আবেদন করেছেন। এত দিন পর বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে করা নিজের অভিযোগের সুরও নাকি নরম করেছেন তিনি। খেলোয়াড় যেহেতু, যেকোনো মূল্যে খেলায় ফিরতে তো তিনি চাইবেনই!

২০১৯ সালের একটি ঘটনা। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে কামরাঙ্গীরচরের বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে হট্টগোল বাধাল ঢাকা রয়্যালস। পরে অধিনায়কের রিপোর্টে ঢাকা রয়্যালস অধিনায়ক শাহরিয়ার অনিক আম্পায়ারকে ‘চোর’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। ওই ঘটনার ৮-১০ দিন পর শাহরিয়ার ও কোচ সাইফুল ইসলামকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিসিবি, যে শাস্তি এখনো বহাল। অভিযোগ আছে, তাঁদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই।

গত কয়েক বছরে ঢাকার ক্রিকেটের এ রকম ঘটনার অভাব নেই। আউট না হলেও ব্যাটসম্যানকে আউট দেওয়া, আবার আউট হলেও আউট না দেওয়া, ওয়াইড-নো নিয়ে গড়বড় তো আছেই। ঘটনাগুলো নতুন করে সামনে আনার কারণ, গত পরশু বিসিবির গঠন করা একটি তদন্ত কমিটি। পাঁচ সদস্যের এই কমিটি নাকি বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে কথা বলে চলমান প্রিমিয়ার লিগের আম্পায়ারিং নিয়ে অভিযোগ তদন্ত করে দেখবে। আগামীকালের বোর্ড সভায় এ নিয়ে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। তার আগে গতকাল রাতে প্রিমিয়ার লিগে ৯টি ক্লাবের কোচদের সঙ্গে অনলাইনে কথা বলেছেন কমিটির সদস্যরা।

সেটা না হয় বললেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ক্লাব ক্রিকেটে পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের যেসব কলঙ্কিত ঘটনা ঘটেছে, সেসব নিয়ে যত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, সবই কি বিসিবির চোখ এড়িয়ে গেছে! এসবের তদন্ত তো আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। আর এখন যদি তদন্ত করতেই হয়, সব ঘটনারই তদন্ত হওয়া উচিত। কাকে কীভাবে বা কোন ধারায় শাস্তি দেওয়া হয়েছে, কেউ অন্যায়ভাবে শাস্তি পেলেন কি না বা কোনো আম্পায়ার অন্যায় করেও পার পেয়ে গেলেন কি না, সবকিছুই খতিয়ে দেখতে হবে।

সেটি করতে চাইলে তদন্ত কমিটির হাতে তথ্য-উপাত্তের অভাব হওয়ার কথা নয়। ঢাকার ক্রিকেটে হওয়া এসব অনাচারের খবর বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় এসেছে। টেলিভিশনে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে। অনেক ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। আজ পর্যন্ত সেসবের কোনোটারই তো প্রতিবাদ করেননি অভিযুক্ত ব্যক্তিরা! এ রকম অনেক ম্যাচ শেষেই অধিনায়কের রিপোর্ট এবং ক্লাবের পক্ষ থেকেও সিসিডিএমে লিখিত প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তথ্য-প্রমাণ হিসেবে সে রকম কাগজেরও অভাব হবে না। ক্লাব ক্রিকেটের হাওয়া সত্যি সত্যিই বিশুদ্ধ করতে চাইলে তদন্ত কমিটিকে এই সবকিছু নিয়েই কাজ করতে হবে। নয়তো বিষয়টিকে লোকদেখানোই মনে হবে।

যেমন মনে হচ্ছে সাকিব আল হাসানের শাস্তিটাকে। অনেকেই সাকিবের স্টাম্পে লাথি মারা এবং স্টাম্প উপড়ে ফেলার ঘটনাকে কলুষিত ক্লাব ক্রিকেটের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন। অপরাধ করেও তাই সাকিব যেন ‘নায়ক’! কিন্তু যে বিসিবি এর আগে সুজন-শাহরিয়ারদের ঘটনায় এত কঠোর হলো, সাকিবের ক্ষেত্রে অনেক হাঁকডাক দিয়েও তারাই কত কোমল! সাকিবকে যে তিন ম্যাচের বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হলো, সেটি তাঁর অপরাধের তুলনায় অতি নগণ্য।

সাকিব একই ম্যাচে আচরণবিধির লেভেল-৩ পর্যায়ের অপরাধ করেছেন দুবার এবং তাতে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারত ৭ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ও কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। কিন্তু বিসিবি জরিমানার অঙ্কটা (পাঁচ লাখ টাকা) অনেক বড় রাখলেও বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে মাত্র তিন ম্যাচের জন্য। প্রথমবারের অপরাধে এক ম্যাচ, যেটা সর্বোচ্চ হতে পারত দুই ম্যাচ। দ্বিতীয় অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে দুই ম্যাচের জন্য, যেটা সর্বোচ্চ হতে পারত পাঁচ ম্যাচও।

রইল বাকি টাকার অঙ্ক। হ্যাঁ, ঘরোয়া ক্রিকেটে জরিমানা হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা অনেক বেশিই। কিন্তু সাকিবের মতো একজন ক্রিকেটার, যিনি কিনা আবার মোহামেডানের মতো একটি বড় দলের অধিনায়কও, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা আসলে তাঁর জন্য কিছুই নয়। মজার ব্যাপার হলো, সাকিব অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ার পরও মোহামেডান এই শাস্তি প্রত্যাহারের আবেদন করেছে।

বিসিবি হয়তো বলবে, সাকিবের শাস্তি আচরণবিধির ধারা মেনেই হয়েছে। তাহলে তো সেই প্রশ্নও আসে-সুজন, শাহরিয়ারদের যে সাকিবের চেয়েও কম অপরাধে অত বড় শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কোন আচরণবিধি মেনে?

সাকিব আল হাসানের ‘বিখ্যাত’ হয়ে যাওয়া লাথিটা ক্রিকেটের চেতনাবিরোধী সন্দেহ নেই। তবে ক্লাব ক্রিকেটের দুষ্টু চক্রের দেয়ালে সেটা প্রচণ্ড এক আঘাতও। সেই আঘাতে ক্রিকেট প্রশাসন এতটাই টালমাটাল যে সাকিবকে ন্যূনতম শাস্তি দিয়েই দায় সেরেছে তারা। বেশি কঠোর হলে সাকিব আবার কোথায় আঘাত করে বসেন, কে জানে!

আরবিসি/১৪ জুন/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category