• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন

তিন‘রক্ষিতা’ নিয়ে উত্তরায় লুকিয়ে ছিলেন নাসির

Reporter Name / ৮৫ Time View
Update : সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, এটা অমির বাসা। পরীমণির সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে নাসির তার তিন রক্ষিতাকে নিয়ে এ বাসায় পালিয়ে ছিলেন। মাদক রাখার অভিযোগে সে তিন জনকেও আমরা গ্রেফতার করেছি।

নাসির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাসিরের বিরুদ্ধে আগেও মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। নানা অভিযোগে তাকে উত্তরা ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জেনেছি। কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আমরা সেগুলোর তদন্ত করব।

পরীমণি ক্লাবের সদস্য না হয়ে সেখানে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার বলেন, তিনি (পরীমণি) স্বনামধন্য নায়িকা। ওখানে (বোট ক্লাব) যেতেই পারেন। গেলেই যে তাকে ওখানে হ্যারেজ (হয়রানি) করবে, সেটা ঠিক না। আসলে কী ঘটেছে তা বিস্তারিত তদন্ত করে বলতে পারব।

তিনি বলেন, এই ঘটনা নিয়ে রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন পরীমণি। সংবাদ সম্মেলনের পরপরই আমরা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তবে যেহেতু রাতে মামলা হয়নি, তাই আমরা অ্যাকশনে যাইনি। সাভার থানায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করি।

হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় নাসিরকে সাভার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে বর্তমানে মাদক উদ্ধারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান হারুন।

কে এই নাসির?

নাসির ইউ মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য। তিনি ৩৭ বছর ধরে ডেভেলপার ব্যবসায় যুক্ত আছেন। ১০ বছর ধরে মাহমুদ কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। কুঞ্জ ডেভেলপার্সের আগে তিনি মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের এমডি ছিলেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান সরকারের গণপূর্ত অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি), রাজউক, রেলওয়েসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ করেন।

নাসির ইউ মাহমুদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সাবেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য। তিনি ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের উত্তরা ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি এবং লায়ন ক্লাবের ঢাকা জোনের চেয়ারম্যান ছিলেন।

এছাড়াও তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাপার ৯ম কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়।

 

পরীমণির মামলা

ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি। সোমবার (১৪ জুন) সাভার থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। এর আগে সকালে রূপনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন পরীমণি।

সাভার থানার পরিদর্শক কাজী মাইনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরীমণি নিজে বাদী হয়ে মোট ৬ জনের নামে এ মামলা করেছেন (মামলা নম্বর ৩৮)।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ৯ জুন (বুধবার) রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়।

রোববার (১৩ জুন) রাতে প্রথমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন এই অভিনেত্রী। পরে তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন।

পরীমণি বলেন, এমন ঘটনায় সাধারণত মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন?

কী ঘটেছিল সেটা জানতে চাই, আপনি নির্ভয়ে বলুন— উপস্থিত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পরীমণি বলেন, আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন।

পরীমণি আরও বলেন, সাধারণ কোনো মেয়ের বিষয় হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!

তিনি বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী)। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত/আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরুব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ)। তিনি বোর্ড ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন।

‘নাসির উদ্দিনসহ (নাসির ইউ মাহমুদ, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী) উপস্থিত সাত/আটজন আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। আমাকে আটকে ফেলে। জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করে। জিমিকে মারধর করা হয়। অশ্লীল নানা কথাবার্তা বলা হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।’

নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ) তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন পরীমণি।

আরবিসি/১৪ জুন/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category