নওগাঁ প্রতিনিধি: উত্তরের খাদ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত বরেন্দ্র সীমান্তবর্তি জেলা নওগাঁ। মূলত ধান ও চাল উৎপাদনের জন্য এ জেলা বিখ্যাত হলেও গত কয়েক বছর যাবত সুমিষ্ট আম উৎপাদনেও দেশসেরার তালিকায় নওগাঁ জেলা। ইতোমধ্যেই বাজারে এসেছে নওগাঁর সুমিষ্ট আম।
কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নওগাঁর সুমিষ্ট আমকে রাজশাহী কিংবা চাঁপাইয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি বিদেশেও চালান করে প্রতারণা করে আসছে। জেলাতে যেসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে তার অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক। কৃষিই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল চাবিকাঠি। গত ১০ বছরে ধানের পাশাপাশি আম চাষাবাদের ফলে পাল্টে গেছে এ জেলার চিত্র। ভারতীয় সীমান্তবর্তি পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট উপজেলাতে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠেছে শত শত বিঘা জেিমেত আমের বাগান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আমের চাষ হয়েছে ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় আম্রপলি ৭৬ শতাংশ, বারি-৪ আম ৬ শতাংশ, আর্শ্বিনা ৭ শতাংশ, ফজলি ৩ শতাংশ, ল্যাংড়া ৩ শতাংশ, ক্ষিরসাপাত ২ শতাংশ, গৌড়মতি ১ শতাংশ, কাটিমন ১ শতাংশ ও অন্যান্য জাতের ১ শতাংশ জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে।
অন্যান্য আবাদের চেয়ে আম চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় ২০০৯ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে ধান চাষের পাশাপাশি আম বাগান গড়ে উঠতে শুরু করে। একসময় নওগাঁর মানুষরা আম বলতে পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম খুঁজতো অথচ কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে জন্ম নেওয়া আম কিনতে দেশ-বিদেশের মানুষ আসে এই এলাকায়।
সাপাহারের আম চাষী নওশাদ আলী জানান, দুই বছর বয়সের আম বাগান থেকে চার লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এবার নতুন করে আবার ১৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আম বাগান তৈরি করেছি। আল্লাহর রহমতে এবার ফল ভালো ধরেছে।
নওগাঁয় প্রায় ছোট-বড় ২৫০টি আমের আড়ৎ রয়েছে। গত বছর এই আড়তগুলোর অধীনে কাজ করছেন প্রায় ১০ হাজার মৌসুমি শ্রমিক। নওগাঁর অর্থনীতির চাকা বরেন্দ্র অঞ্চলের আমে ঘুরছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে প্রতিদিন শত শত ট্রাক আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত মৌসুমে নওগাঁর আমচাষীরা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বিক্রি করেছেন। এতে চাষীদের ঘরে এসেছে স্বচ্ছলতা, তেমনি মৌসুমজুড়ে হয়েছে হাজারো মানুষের কাজের সুযোগ। জেলার সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় সীমান্তবর্তি সাপাহার উপজেলায় ১ লাখ ১৯ হাজার ১৬০ টন, পোরশায় ১ লাখ ১৫ হাজার ১৯৯ টন, পত্নীতলায় ১ লাখ ১১ হাজার টন। চলতি মৌসুমে ২৫০০ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে।
সাপাহার আম আড়ৎ মালিক সমিতির আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা জানান, গত ১০ বছরে সাপাহারে আম বাজার ঘিরে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আম কিনতে আসেন। তাদের পছন্দমতো আড়তে অবস্থান করে ধিরস্থিরভাবে সরাসরি কৃষকের বাগান থেকে আম কিনতে পারেন। এমন সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা বাংলাদেশে আর কোনো জেলাতে নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ততরের উপপরিচালক ছামসুল ওদাদুদ বলেন, নওগাঁ জেলা বরেন্দ্র অঞ্চলভুক্ত এলাকা। জেলার পোরশা, সাপাহার, ও পত্নীতলা উপজেলায় বেশি আমবাগান গড়ে উঠেছে। বরেন্দ্র এলাকায় পানির পরিমাণ কম আবার সেচ-সুবিধাও নেই। তাই মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণেই আমের প্রচুর ফলন হয়। এখন ফলনের পরিমাণে জেলার আম বাগানগুলোতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়েও বেশি হচ্ছে। জেলায় নতুন নতুন বাগান হচ্ছে এবং ফলনও বাড়ছে। গত বছর জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৭২ হাজার মেট্টিক টন তার তুলনায় চলতি বছর ৩ লাখ ২০ হাজার মেট্টিক টন আম বাজারজাতের আশা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ বলেন, জেলার প্রধান আম হচ্ছে সুমিষ্ট আম্রপলি। এ আমের ওপর ভিত্তি করেই নওগাঁ ব্যান্ডিং হয়েছে। আম্রপালি নামটি হাইব্রিড জাতের আম। জেলায় বেড়েই চলেছে আমের বাগান।
বর্তমানে নওগাঁ থেকে সীমিত পরিমাণে আম বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। তাছাড়া ২০২০ সাল থেকে বারি আম-৩ বা আম্রপালি বিখ্যাত কোম্পানি ওয়ালমার্টের চাহিদার তালিকায় রয়েছে। রফতানিযোগ্য আমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সঠিক ভাবে বাজারজাত করার সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সম্পন্ন করেছে।
আরবিসি/০৯ জুন/ রোজি