আরবিসি ডেস্ক : জাতীয় সংসদে সদ্য উত্থাপিত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বেশ কয়েকটি সেবা ও ফ্রিল্যান্সারদের আয়কে করমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।
একই সাথে হার্ডওয়্যার পণ্য দেশেই উৎপাদন করলে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর কর অব্যাহতিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫০তম এবং সর্ববৃহৎ আকারের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন সেবা যেমন- ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টেগ্রেশন, ই-লার্নিং, ই-বুক, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিং সেবা থেকে উদ্ভূত আয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি হার্ডওয়্যার পণ্য বাংলাদেশেই উৎপাদনের ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর কর অব্যাহতিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়াও ২২টি আইটিইএস খাতকে আরও সম্প্রসারণের প্রস্তাব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তথ্য প্রযুক্তির কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত খাতকে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত বাজেটে কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত ২২টি আইটিইএস খাতকে আরও সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব পেশ করছি। এতে বাংলাদেশের ডিজিটাল ট্র্যান্সফরমেশন ত্বরান্বিত হবে, সহজে ও কম খরচে উন্নত ডিজিটাল সেবাকে জনগণের জন্য সহজলভ্য করা যাবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দেশে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ক্লাউড, সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টেগ্রেশন, ই-লার্সিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন্স, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিং সেবা হতে উদ্ভূত আয়কে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির প্রস্তাব পেশ করছি। এছাড়াও কতিপয় আইটি হার্ডওয়্যার বাংলাদেশে উৎপাদন করলে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করছি।
দেশের আইটি-আইসিটি ও আইটিএস খাত নিয়ে বাজেটের এমন প্রস্তাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়াও আছে।
দেশের আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, বাজেটের বেশিরভাগই দিক ভালো এবং প্রশংসনীয়। কিছু মন্দ দিকও আছে। ভালো দিয়ে বললে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে কর মওকুফ করা হয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক। ফলে স্থানীয় উৎপাদকেরা উৎসাহিত হবে। দ্বিতীয়ত, ফ্রিল্যান্সারদের আয়কে করমুক্ত রাখা হয়েছে এর ফলে তারা তাদের আয় এখন প্রদর্শন করবেন। যারা অর্থ দেশে আনতেন না তারা এখন দেশে আনবেন। কাজেই এগুলো খুবই ভালো দিক। এছাড়াও আইটিইএস খাতকে সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। এটাও খুব দারুণ একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকে আমরা আইটিইএস সেবার আওতায় আনার কথা বলে আসছিলাম। সেটি এবারও করা হয়নি।
আলমাস কবীর আরও বলেন, কিছু নেতিবাচক দিকের মধ্যে আছে যেমন ইন্টারনেট সেবাকে আইটিইএস সেবার আওতায় না আনা। উপরন্তু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের করের আওতায় আনা হয়েছে। এটা না করে ইন্টারনেট ওপর ভিত্তি করে যেসব নতুন নতুন সেবা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে সেগুলোর উপর কর ধার্য করা যেত। আরেকটি আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে যে, আমরা ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করার কথা বলছি, কিন্তু মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর উপর কর্পোরেট ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এটা তো আসলে গ্রাহক পর্যায় থেকেই আদায় করবে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে গ্রাহকেরা এমএফএস এ নিরুৎসাহিত হতে পারেন।
তবে এসব বিষয় সরকারকে পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান বেসিস সভাপতি।
আরবিসি/০৪ জুন/ রোজি