আরবিসি ডেস্ক : রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ মরদেহ উদ্ধারের ৩৫ ঘণ্টা পর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুন) রাত ১২টার দিকে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে মামলাটি করেন নিহতের মামাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল। মামলা নম্বর ১/৯৪। রমনা বিভাগের নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, মামলার আসামি অজ্ঞাত। নিহতের পরিবার বিলম্বে থানায় আসায় মামলা নথিভুক্ত হতে বিলম্ব হলো। তবে ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে কলাবাগান থানা পুলিশ তদন্ত করছে। পাশাপাশি ডিবি পুলিশও তদন্ত করছে।
এর আগে গতকাল (৩১ মে) কলাবাগানের ওই বাসা থেকে এ চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) ছিলেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগুনের খবরে ওই বাসায় গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ধোঁয়া দেখতে পান। নিহত চিকিৎসকের শরীরের কিছু অংশ দগ্ধ ছিল বলে জানান তারা। মরদেহ উদ্ধারের পর পিঠে দুটি ও গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ।
খবর পেয়ে সেদিনই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা মরদেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করেন।
ক্রাইম সিন জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিলড) করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে, সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।
একইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য সাবিরার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠায় কলাবাগান থানা পুলিশ। আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চিকিৎসক সাবিরা হত্যার ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি পুলিশ। তারা হলেন, সাবলেটে থাকা শিক্ষার্থী, তার এক বন্ধু, গৃহপরিচারিকা ও বাড়ির দারোয়ান রমজান। ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরে আরও ৬/৭ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।
এ বিষয়ে আজ রমনা গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, সাবিরা হত্যার ঘটনায় যাদেরকেই জিজ্ঞাসাদের প্রয়োজন মনে তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত পর্যায়ে এখনই বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
সাবিরা কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের বাড়িটির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তিনি ফ্ল্যাটের দুটি রুম এক তরুণীকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন। সোমবার সকালে সাবলেটে থাকা তরুণী হাঁটতে বের হয়েছিলেন। তিনি বাসায় ফিরে দেখেন, সাবিরার রুম বন্ধ। রুমের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরে তিনি দারোয়ানকে ডেকে চাবি এনে রুমের তালা খুলে দেখতে পান সাবিরা ফ্লোরে পড়ে আছেন। সবাই ভেবেছিলেন, আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরে ডিবি এসে তার গলায় একটি আঘাতের চিহ্ন ও পিঠে দুটি আঘাতের চিহ্ন পায়।
সাবিরার মামাতো ভাই মো. রেজাউল হাসান বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। বিষয়টিকে অন্যদিকে ডাইভার্ট (সরাতে) করতে আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা এখনও কাউকে সন্দেহ করছি না। তদন্তের পর পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে।
আরবিসি/০২ জুন/ রোজি