আরবিসি ডেস্ক : আগামী ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশে নতুন করে বিপুল সংখ্যক বেকারত্বের সৃষ্টি হয়েছে। এসব বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদায়ী অর্থ বছরের বাজেটেও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থ বছরেও এসব কর্মসূচী অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বর্তমান তহবিলের বরাদ্দ ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকার সঙ্গে আরো ১৭১০ কোটি টাকা যোগ করা হবে। বিশেষ করে গ্রামীন জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দারিদ্র বিমোচনে এসব কর্মসূচী বিশেষ অবদান রাখবে বলে মনে করছে সরকার।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে তার বাজেট বক্তব্যে করোনা মহামারির সময়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং এ খাতে অর্থায়নের বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে ফিরে আসা অভিবাসীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সরকার দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে বলেও আশা করা হচ্ছে। বেসরকারি খাতে ঋণ সরবরাহ বাড়ানো এবং মেগাপ্রকল্পের মতো বিভিন্ন উপায়ে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এবং অক্সফাম পরিচালিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের মহামারির আগে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকলেও গেল বছর মার্চ-এপ্রিলের লকডাউনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ৬১ ভাগের বেশি মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছেন।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে এদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ এক মাসের মধ্যে তাদের কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পেরেছেন। আর ৮৫ ভাগই দীর্ঘ সময় ধরে কর্মহীন রয়েছেন। এ অবস্থায় বেকারত্ব বরণ করে অনেকের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ব চারটি বিশেষায়িত ব্যাংক-কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ব্যাংক করোনারভাইরাসের কারণে ক্ষতি কাটিয়ে অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবির) দেওয়া এক হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করবে।
প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজের এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা ইতোমধ্যেই এসএমই ফাউন্ডেশন ঋণ হিসেবে ক্ষুদ্র এবং ছোট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতরণ করেছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন ১০০ কোটি টাকা, জয়িতা ফাউন্ডেশন ৫০ কোটি টাকা, এনজিও ফাউন্ডেশন ৫০ কোটি টাকা, সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ৩০০ কোটি টাকা, পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন ৩০০ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ১০০০ কোটি এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ৩০০ কোটি টাকা পেয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেশ কয়েকটি কর্মসূচি নেওয়া হবে। বিদায়ী বাজেটে ‘টেস্ট রিলিফ স্কিম’ এর আওতায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কাজের বিনিময়ে কর্মসূচির আওতায় সরকার আরো এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল।
সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা বহুমুখী সেতু, দোহাজারী-কক্সবাজার-গুন্ডাম রেল লিংক, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এবং কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং মেট্রো রেলের মতো চলমান মেগাপ্রকল্পে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ।
২০২০-২১ অর্থবছর থেকে শুরু হওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনায় সরকার ১১ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর জোর দিচ্ছে সরকার।
আরবিসি/০১ জুন/ রোজি