স্টাফ রিপোর্টার : আমের বেচাকেনায় জমে উঠতে শুরু করেছে রাজশাহীর বাজার। পিছিয়ে নেই আমের অনলাইন ব্যবসাও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্বল্পপুঁজি ও বিনাপুঁজিতে মৌসুমি এ ব্যবসায় নেমেছেন অনেক শিক্ষার্থী।
চাহিদা বেশি থাকায় বাগান মালিকরাও পাচ্ছেন ভালো দাম। সামনে আমের দাম আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনাকালে অনলাইন নির্ভরশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে অনলাইন মার্কেট প্লেস। ঘরে বসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতারা পেয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন জাতের আম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরী এবং জেলার কয়েকটি উপজেলায় অনলাইনে আম বেচাকেনা হচ্ছে। ছোট বড় প্রায় ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী এর সঙ্গে জড়িত আছেন। মৌসুমি অনলাইন ব্যবসায়ীরা সরাসরি আম বাগানসহ রাজশাহীর বৃহৎ আম বাজার পুঠিয়ার বানেশ্বর থেকে আম কিনে তা অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অর্ডার করার এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে আম।
বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, গ্রুপ ও ওয়েবসাইটে প্রচারণা চালাচ্ছেন মৌসুমি উদ্যোক্তারা। ফোনে অর্ডার নিয়ে সে অনুযায়ী কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে আম।
অনলাইনের মাধ্যমে আমের মৌসুমি ব্যবসা করছেন রাজশাহী কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুস সালাম। তিনি জানান, অনলাইনে মাধ্যমে আমের ব্যবসা ভালোই লাভজনক। গত বছর থেকে তিনি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন। গতবার ভালো লাভ হয়েছিল। তবে গতবার আমের গুণগত মান নিয়ে ক্রেতাদের থেকে কথা শুনতে হয়েছিল। এবার আমের গুণগত মান ভালোই মনে হচ্ছে।
শুধু অনলাইনেই নয়, লাভজনক এ ব্যবসায় সরাসরি যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন ব্যবসায়ী। এমনই একজন নাইম ইসলাম। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি চারটি বাগানের আম কিনেছেন। এই আম সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারসহ উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন।
তিনি জানান, আমের ব্যবসায় একটি মৌসুমেই হয়ে থাকে। মৌসুমি হলেও এটি লাভজনক ব্যবসা। তিনি এবার নতুন শুরু করেছেন এবং ভালো সাড়াও পাচ্ছেন।
এদিকে রাজশাহীর স্থানীয় আমের বাজারগুলোও জমে উঠতে শুরু করেছে। সরাসরি আম বেচাকেনার চেয়ে প্যাকেটজাতকরণ করতেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে অনেক আম ব্যবসায়ীকে। গতানুগতিক ব্যবসার সঙ্গে অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ারযোগে ক্রেতার কাছে আম পৌঁছে দিচ্ছেন।
রাজশাহীর আম বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বর্তমানে গোপালভোগ ও খিরসাপাত আমই বেশি রয়েছে। গুটি জাতের আম কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুটি জাতের আম প্রায় শেষের দিকে।
সোমবার খিরসাপাত ও গোপালভোগ আম পাইকারি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। খুচরা ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। হিমসাগর খুচরা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এছাড়া লক্ষণভোগসহ বিভিন্ন গুটি জাতের আম ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে।
রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এখন অনলাইনের মাধ্যমে আমের বেচাকেনা বেশি। একারণে অনেকেই আগে যারা শুধু সরাসরি বিক্রি করতেন তারাও অনলাইনের দিকে ঝুঁকছেন। এবার তেমন ঝড় বা আমের ক্ষতি হয়- এমন দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়নি। এতে আমের গুণগত মান ভালো আছে। আর আমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সামনে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথাও জানান তিনি।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. অলিম উদ্দিন জানান, রাজশাহীর আম সবসময় অন্য জেলাগুলোর চেয়ে গুণগত মানে ভালো হয়ে থাকে। রাজশাহীর মাটি ও আবহাওয়ার কারণেই মানটা ভালো হয়। আর এবার আমের ক্ষতি হয় এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ তেমন হয়নি। বরং যে সময় বৃষ্টির দরকার সে সময় বৃষ্টি হয়েছে। এতে এবার আমে পোকাসহ রোগ-বালাইয়ের তেমন আক্রমণ নেই। গুণগত মানও ভালো।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল জানান, এবার রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনার রয়েছে। কারণ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হতে পারে। গুণগত মানও ভালো। এরই মধ্যে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও আম রফতানি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে অনলাইনেও কেনাবেচা বেড়েছে।
আরবিসি/০১ জুন/ রোজি