আরবিসি ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। পেশাদারিত্বের পাশাপাশি অর্পিত দায়িত্বের প্রতি একনিষ্ঠতা, শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও মানবিক আচরণ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের এই সাফল্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বিদায়ী বছর ২০২০ সালে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস অতিমারীর মধ্যেও বাংলাদেশের এই সাফল্য অর্জন বিদেশে ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছে। শুধু সাফল্য অর্জনই নয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশের সাফল্য অর্জনের সৌভাগ্য হচ্ছে দুটি। এর একটি হচ্ছে, শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে প্রথম। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মর্যাদা লাভ। শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানের পর থেকে গত ৩১ বছরে এই ধরনের সাফল্য অর্জনের সৌভাগ্য অর্জনের পেছনে কাজ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিদায়ী বছরে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানের পর গত ৩১ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত নারীদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নারী পাইলটদের নিয়ে খুব গর্ববোধ করি। এখন সব জায়গায় মেয়েদের একটা ভাল সুযোগ আছে।’ তিনি যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশ শান্তি, নিরাপত্তা রক্ষা ও শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে অবদান রেখে চলেছে। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত ও উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন। এ কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।
আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর কয়েক হাজার কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিভিন্ন দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করছেন। সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে এপিসি বা যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক ফ্রিগেট ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, ওয়ার কলেজ, আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ, শান্তিরক্ষা ইনস্টিটিউট, সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ছয়টি মিশন নিয়োজিত রয়েছে। এসব মিশনে ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্ত হয় পুলিশ। এরপর গত ৩১ বছরে এ পর্যন্ত পুলিশের ১৯ হাজার ৮৪৬ সদস্য মিশন শেষ করেছেন।
বাংলাদেশের জন্য পরম গৌরবের বিষয় হলো এ মুহূর্তে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ১২২টি দেশের ৮০ হাজার ১৮৪ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৬ হাজার ৭৪২ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী রয়েছেন। এ সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত মোট শান্তিরক্ষীর ৮.৪০ শতাংশ, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এ ছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৫টি ইউএন মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৮টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল পদবির কর্মকর্তা এবং কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও দক্ষিণ সুদানে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। দক্ষতার কারণেই তারা এসব উচ্চ পদ পেয়েছেন। দেশবাসী আশা করে আগামী দিনগুলোতে আরও স্বদেশী শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যুক্ত হয়ে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবেন।
আরবিসি/৩১ মে/ রোজি