আরবিসি ডেস্ক: বিশ্ববাজারে বেড়েই চলেছে স্বর্ণের দাম। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। মাঝে কিছুটা দাম কমলেও প্রায় দুই মাস ধরে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে।
গত সপ্তাহে এক শতাংশেরও বেশি বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম আবারও ১ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়েছে। স্বর্ণের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে রুপা এবং প্লাটিনামেরও দাম বেড়েছে।
বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ায় চলতি মাসে দেশের বাজারে দুদফায় ভরিতে স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৩৭৪ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
স্বর্ণের এই দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বাজুস জানায়, করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট ও নানা জটিল সমীকরণে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বন্ধ থাকা, আমদানিতে শুল্ক জটিলতা (উপকরণ কর রেয়াত) এবং নানা ধরনের দাফতরিক জটিলতায় ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের বার আমদানি করতে পারছেন না। তাছাড়া চাহিদার বিপরীতে জোগান কম থাকায় দেশীয় বুলিয়ান/পোদ্দার মার্কেটেও স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এ কারণে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৩ মে থেকে স্বর্ণের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, বর্তমানে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ ৭৩ হাজার ৪৮৩ টাকা, ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭০ হাজার ৩৩৩, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬১ হাজার ৫৮৪ ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৮৮১ ডলার। গত এক সপ্তাহে তা বেড়ে এখন ১৯০৩ দশমিক ২০ ডলারে উঠেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২২ ডলার।
আগামী সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হতে পারে।
এ বিষয়ে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে চলতি মাসে আমরা দু’দফায় স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছি। এখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে আবারও দাম বাড়ানো হবে।
বিশ্ববাজারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ শুরু হলে গত বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। দফায় দফায় দাম বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ২ হাজার ৭৪ ডলারে উঠে যায়। আগস্টে পতনের কবলে পড়ে উড়তে থাকা স্বর্ণের দাম।
অবশ্য ডিসেম্বরের শেষার্ধে ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবার বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ে। এতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে ১৯৫০ ডলারে উঠে যায়। যদিও তা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে যায়। ফেব্রুয়ারির পতনের ধারা মার্চ মাসের শুরুতেও দেখা যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমে ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে বড় পতন হওয়ায় মার্চ মাসে দু’দফায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। এর মধ্যে ১০ মার্চ ভরিতে স্বর্ণের দাম কমানো হয় ২ হাজার ৪১ টাকা। তার আগে ৩ মার্চ ভরিতে স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা কমানো হয়।
মার্চের পতনের পর এপ্রিল মাসে এসে বিশ্ববাজারে আবার স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ২২ শতাংশ। এতে মাসের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
স্বর্ণের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বেড়েছে রূপার দামও। গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে রুপার দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স রুপার দাম দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৪ ডলার। সবচেয়ে দামি ধাতু প্লাটিনামের দাম গত সপ্তাহে বেড়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮০ দশমিক শূন্য ৩ ডলারে।
আরবিসি /২৯ মে/ রোজি