আরবিসি ডেস্ক : করোনা মহামারির কারণে ধাক্কা খেয়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। তবে সরকারের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সঙ্কটময় এই পরিস্থিতিতেও অনেক দেশের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া সামনে অর্থনীতির চাকার গতি বাড়াতে নানাবিধ পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২ জুন বসছে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে কারোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই আগামী ৩ জুন সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপিত হবে।
জানা গেছে, করোনাকালে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে প্রাধান্য দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে কিছুটা বাড়তি বরাদ্দ পাচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ থাকছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রয়োজনে তা বাড়ানো বা কমানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রকল্পই শেষ পর্যায়ে। নতুন প্রকল্প না আসা পর্যন্ত সেখানে কিছুটা চাপ কম থাকবে। করোনাভিত্তিক অনুদানগুলো দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয় না, এগুলো সরাসরি অর্থ বিভাগ থেকে দেয়া হয়। এ বছর ৩৫ লাখ পরিবারকে ৮৮০ কোটি টাকা, কৃষকদের ২৪ কোটি, নন-এমপিও শিক্ষকদের অনুদানসহ বিভিন্ন অনুদান সরাসরি অর্থ বিভাগ থেকে দেয়া হয়েছে। সামনের বছরও সেসব অনুদান প্রয়োজন হলে সরাসরি অর্থ বিভাগ থেকেই দেয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী অর্থবছর দুর্যোগ মন্ত্রণালয় মানবিক সহায়তাকে আরও জোরালো করবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এছাড়া টিআর-কাবিটার জন্য বাড়তি বরাদ্দ থাকছে। এর মধ্যে টিআরের জন্যই প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, করোনাকালে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল মানবিক সহায়তায়। জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩-এর মাধ্যমে কাজটি অনেকটা সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে। করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবার। তাদের অনেকে সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে সহায়তা চাইতে পারেন না, তাদের জন্য ৩৩৩-এর মাধ্যমে দ্রুত সহায়তা কার্যক্রম সামনে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া টিআর-কাবিটার মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষ বিভিন্ন মহায়তা পাচ্ছে। দুর্যোগকালে তারা উপকৃত হচ্ছেন আর্থিকভাবেও। ঝড়-বন্যার মতো সমস্যা সমাধানে যে বাড়তি উদ্যোগ আছে, সেসব কার্যক্রমও আগের মতোই চলবে।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়েও ভূমিকা থাকে এই মন্ত্রণালয়ের। সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়। বরাবরের মতো এসব ক্ষেত্রেও নতুন বাজেটে থাকবে পর্যাপ্ত বরাদ্দ।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘আমাদের বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৫ ভাগের বেশি হবে, অর্থাৎ অনেক ভালো। গত মাসে আমরা মিটিং করেছি, সামনে আরেকটি মিটিং আছে। আমরা আশা করছি বাজেট বাস্তবায়নে শীর্ষ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আমরা থাকব। আমরা বাজেটে বরাদ্দের বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, আমাদের যেসব সেক্টরে প্রয়োজন সেগুলোতে তারা বরাদ্দ দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বুঝতে পেরেছে আমাদের মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বটা, বিশেষ করে মানবিক সহায়তার একটা ব্যাপার আছে। প্রধানমন্ত্রী যেটি ঘোষণা দিয়েছেন—গ্রামীণ উন্নয়ন, আমার গ্রাম, আমার শহরের ক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ গ্রামীণ অবকাঠামো, রাস্তা, ছোট ছোট ড্রেন, কালভার্টগুলো আমাদের এখান থেকে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নে আমাদের একটি বড় ভূমিকা আছে। বাজেট গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে, প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যখন আমাদের মিটিং হয় তখন তারা সন্তোষ প্রকাশ করে এবং বলেছে মন্ত্রণালয়ের যে লাস্ট পারফরম্যান্স গ্রামীণ উন্নয়ন এবং কারোনাকালে মানবিক সহায়তা—দুদিক দিয়ে আমরা ভালো করছি। যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম সেভাবে তারা বরাদ্দ দিয়েছে।’
করোনাকালের কথা মাথায় রেখে বাজেটে বাড়তি কিছু থাকছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মানবিক সহায়তাটা একটু বেশি করে চেয়েছি, যেন করোনা চলমান থাকলে পুষিয়ে নেয়া যায়। তাছাড়া আমাদের ১০০ কোটি টাকার বিশেষ একটি খাতও আছে, সেখান থেকে আমরা চাইলে যে কোনো সময় খরচ করতে পারি। অতিদরিদ্রদের জন্য প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের একটি প্রজেক্ট আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের আটটি উপজেলা নিয়ে, সেখানে টাকার পরিমাণও বেশি, কাজও বেশি। ইজিপিপি শীর্ষক এ প্রকল্পটি মূলত রোহিঙ্গাদের সাপোর্ট দেয়ার জন্য। টিআর-কাবিটা গ্রামীণ অবকাঠামোর জন্য বড় একটি ভূমিকা রাখছে। প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক কাজ হয়েছে। নতুন নতুন ইনোভেটিভ কিছু কাজ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৩৩৩-এর আওতায় আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলায় বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। আমরা এটাকে সামনে রেখে মানবিক সহায়তা এগিয়ে নিতে চাই। কেউ যদি কর্মহীন হয়ে পড়ে, যার পক্ষে সামাজিকভাবে বলা সম্ভব হয় না তার জন্য কিন্তু ৩৩৩ সেবা চালু করা হয়েছে। মানিকগঞ্জসহ কয়েক জায়গায় অনেকে ৩৩৩-এ শখের বসে ফোন করতেন। পরে দেখা গেল আসলে তাদের অবস্থা ভালো। এখন আর সেটা করে না, যেহেতু মিডিয়ায় রিপোর্ট হয়েছে। মানবিক সমস্যার বিষয়টি সবসময় বিবেচনায় রাখতে হবে। আমি নিজে ঢাকার বাইরে ত্রাণ দিতে গিয়ে দেখেছি, পোশাক-পরিচ্ছদসহ সবকিছুই ভালো—এমন মানুষ এসে বলছেন কাস্টমার কমে গেছে বলে চলতে কষ্ট হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে। কাবিটা দেয়ায় মানুষ ভালোভাবে কাজটা করতে পারছে।’
আরবিসি/২৯ মে/ রোজি