• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ অপরাহ্ন

পরিবেশবান্ধব বাজেট চান পরিবেশবিদরা

Reporter Name / ১২৬ Time View
Update : শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : একটি দেশের সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পরিবেশ। দূষণমুক্ত, সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ দেশের উন্নতির অন্যতম নিয়ামক। পরিবেশের প্রধান তিনটি উপাদান বায়ু, মাটি ও পানি। সুস্থ পরিবেশের জন্য এ তিনটি উপাদানকে দূষণমুক্ত রাখা জরুরি।

পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে সরকার প্রতি বছরই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাজেটে তা প্রতিফলন করার চেষ্টা করে। যদিও গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিকে সরকার মূলধারায় যুক্ত করছে না বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের। তাই তারা আসন্ন ২০২১-২২ সালের বাজেটে এ খাতটি মূলধারার খাত হিসেবে দেখতে চান। অন্যদিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্তারা বলছেন, এ বছর একটি ‘গ্রিন বাজেট’ পাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, মন্ত্রণালয়ের জন্য আসন্ন বাজেটে ১ হাজার ২২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিবেশবিদদের প্রত্যাশা, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট হবে পরিবেশবান্ধব। এ বছর থেকে সরকার বাজেটে পরিবেশকে যেন মূলধারার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। নীতি নির্ধারকরা যেন পরিবেশের বিষয়টিকে তাদের মনের মধ্যে রাখেন। তাহলে পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা প্রতিফলিত হবে। পরিবেশ দূষণকারীদের জন্য দূষণরোধে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তার কয়েকগুণ বেশি জরিমানার ব্যবস্থা এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়তাকারীদের পুরস্কৃত করার বিষয়টিও বাজেটে দেখতে চান তারা।

ভারত, জাপান, ইউরোপে দূষণ করলে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। জরিমানার পরিমাণটা এমন হবে যে, সেটা দেখে কেউ পরিবেশ দূষণে আগ্রহী হবে না। এছাড়া যারা গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করবে, তাদের বিভিন্ন বিষয় ছাড় দিতে হবে। মূলকথা, যারা পরিবেশ দূষণ করবে তাদের কঠোর জরিমানা এবং যারা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে।

পরিবেশ বাজেট ভাবনা নিয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, এক কথায় যদি বলি তবে, বাজেট পরিবেশবান্ধব চাই। পরিবেশ রক্ষার জন্য যে জিনিসগুলো দরকার, যেসব কলকারখানা পরিবেশের দূষণ করে তাদের বন্ধ করে দিতে হবে। বর্তমানে যে জরিমানা করা হচ্ছে, সেটির পরিমাণ খুবই কম। এটাকে অনেক বাড়াতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ করতে যে পরিমাণ খরচ হবে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জরিমানা নির্ধারণ করতে হবে। ভারত, জাপান, ইউরোপে দূষণ করলে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। জরিমানার পরিমাণটা এমন হবে যে, সেটা দেখে কেউ পরিবেশ দূষণে আগ্রহী হবে না। এছাড়া যারা গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করবে, তাদের বিভিন্ন বিষয় ছাড় দিতে হবে। মূলকথা, যারা পরিবেশ দূষণ করবে তাদের কঠোর জরিমানা এবং যারা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে।

 

তিনি বলেন, জলবায়ু রক্ষার জন্য বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। এই যে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। তার কারণ এসব বাঁধ স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়নি। স্থায়ী বাঁধ তৈরির জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় বাজেট আরও বৃদ্ধি করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, আমাদের দেশে এখনও পরিবেশকে মনে করা হয় কস্ট কাটিং ইস্যু। কিন্তু সারা বিশ্বে পরিবেশ একটা মেইনস্ট্রিম ইস্যু। পরিবেশকে মেইনস্ট্রিম‌ করার যে মাইন্ড সেট, সেটির রিফ্লেকশন আসে বাজেট থেকে। বিগত বছরগুলোয় দেখবেন পরিবেশের জন্য যে বাজেট করা হয়েছে, তা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটের তুলনায় কম। পরিবেশের ক্ষতির কারণে আমাদের অর্থনীতিতে যে পরিমাণ নেতিবাচক প্রভাব আছে, সেটাকে ক্যালকুলেশন যদি করা হয় তাহলে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশকে অন্যান্য মেইনস্ট্রিম মন্ত্রণালয়ের সমান এফোর্ড দেওয়া প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদফতরের লোকবল নেই, তারা মনিটরিং করবে কীভাবে? পরিবেশ আদালত হয়েছে, কিন্তু এটি এখনও কার্যকর হয়নি। কাজেই পরিবেশের জন্য বাজেটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা দরকার।

তিনি আরও বলেন, এই যে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় আসছে সেগুলো তো জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। আমাদের দেশ নদীবিধৌত পলি ভূমি দ্বারা গঠিত বদ্বীপ। আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্তাদের মনস্তাত্ত্বিক জগতে পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলেই বাজেটে এটা রিফ্লেকশন আসবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশের প্রধান সমস্যাগুলোকে ধরে তারপর পরিবেশের বাজেট তৈরি করা উচিত। শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদফতরের মনিটরিংয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো টাকার জন্য ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) চালায় না। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সময় তারা কথা দেয় ইটিপি চালু রাখবে। এ জন্য যদি কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকি দিতে হয়, সেটার ব্যবস্থাও করতে হবে।

 

তিনি আরও বলেন, দেশের প্রত্যেকটা জেলায় ন্যূনতম লোকবল দিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের অফিস যেন থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বায়ু দূষণের জন্য প্রত্যেক জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মনিটরিং স্টেশন যেন থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। বায়ু দূষণ মনিটরিং করার জন্য পরিবেশ অধিদফতরে যেন আলাদা সেল থাকে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

বাজেট নিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শিল্প দূষণ এবং বায়ু দূষণ এ দুটোকে যদি আপাতত সময়ের জন্য টার্গেট করা যায়, তবে পরিবেশের দৃশ্যমান উন্নতি মানুষের চোখে পড়বে। যেহেতু পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বনবিভাগ পড়ে। তাই বন বিভাগের নগরায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। সব প্রাকৃতিক বন পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিশদ পরিকল্পনা করে সেটা বাস্তবায়ন জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, সেটা দেওয়া জরুরি। এটার জন্য খুব বেশি বাজেটের প্রয়োজন হবে না। বন আসলে না ধরলেই ভালো থাকে। এটার জন্য শুধু মনিটরিংটা ভালো লাগবে। অনেক জেলায় অফিস নেই, সেগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বায়ু দূষণ এবং শিল্প দূষণ মনিটরিংয়ের জন্য টাকার প্রয়োজন হবে। মনিটরিংয়ের জন্য যত লোকবল প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের পরিমাণ নিয়ে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় উপসচিব (বাজেট) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ২২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটা এখন সংসদে যাওয়ার অপেক্ষায়। এটা একটি খসড়া প্রস্তাব। সংসদে পাস হয়ে আমাদের কাছে যখন দেবে, তখন সেটি হবে চূড়ান্ত বাজেট। এই পরিমাণ বাজেট পেলে ভালোভাবে পরিবেশের জন্য কাজ করা যাবে।

পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, এবার আমাদের মন্ত্রণালয়ের জন্য ভালো বাজেট পাবো বলে আশা রাখছি। আমাদের গ্রিন বাজেট করার প্রস্তাব আছে। সব মন্ত্রণালয়ের কাজ যেন পরিবেশসম্মত হয়, সে বিষয়ে আমরা গ্রিন বাজেটের প্রস্তাব করেছি।

আরবিসি/২৮ মে/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category