আরবিসি ডেস্ক : ভবিষ্যতে ডাকের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য, ফলমূলসহ বিভিন্ন পচনশীল পণ্যও পাঠানো যাবে। এ ধরনের পণ্য পরিবহন সেবা দিতে কুলিং চেম্বার বিশিষ্ট গাড়ি ও গুদামঘরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ডাক বাক্সের আদলে নির্মিত নান্দনিক নতুন ডাক ভবন উদ্বোধনকালে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পচনশীল জিনিস অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে ফলমূল, তরি-তরকারি এগুলোও যেন ডাকের মাধ্যমে পাঠানো যায়। আমি মনে করি এখানে রান্না করে আরেক জায়গায় খাবার পাঠাবো বা কোনো আত্মীয়ের কাছে পাঠাবো সেটাও যেন পাঠাতে পারি। এজন্য কুলিং সিস্টেমটা দরকার। সেই ধরনের টেমপারেচার বা ফ্রিজিং সিস্টেম করে দেওয়া, যাতে সেখানে জিনিসটা নষ্ট হবে না এবং যার হাতে যাবে তার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। সে ধরনের গাড়ি কিনে এই ডাকের মাধ্যমে মানুষ যেন সেবা পায় সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে শুধু গাড়ি কিনলে হবে না, এখানে চেম্বার দরকার, সেজন্য ডাকঘরগুলোতে কুলিং সিস্টেমযুক্ত চেম্বার যাতে তৈরি হয় তার ব্যবস্থা, অর্থাৎ ওয়্যার হাউজ নির্মাণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এরকম সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে যারা নিয়ে যাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই কুলিং সিস্টেম। এখন তো যথেষ্ট পোর্টেবল বক্স পাওয়া যায়। কাজেই পৌঁছে দিতে পারবে। সেভাবেই ডাকের সেবাটা একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। সেই ব্যবস্থাটাও এখন নিতে হবে। হ্যাঁ ধাপে, ধাপে আমরা এগোচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাক বাছাই ত্বরান্বিতকরণ ও পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য কুলিং চেম্বারের সুবিধা সম্বলিত ওয়্যারহাউজ যুক্ত ১৪টি অত্যাধুনিক মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হচ্ছে। এটাকে প্রথমে আমরা জেলা ও বিভাগীয় শহরে করে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থাকবে, ডাক বিভাগকে আমরা বলবো আপনারা এরকম প্রজেক্ট নেবেন একেবারে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ ডাকঘর যেখানে যেখানে আছে সেখানে এই ব্যবস্থাটা থাকতে হবে।
জেলা ও বিভাগীয় সদরে আধুনিক মেইল প্রসেসিং, কুলিং সুবিধাযুক্ত স্টোরেজ, ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এবং গ্রাহকবান্ধব ৩৮টি মডেল ডাকঘর নির্মাণ কাজে সরকার হাত দিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
ডাক বিভাগের মাধ্যমে বহুমুখী সেবা প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ডাক সিস্টেম এটা শুধু ডিজিটালাইজড করা না, আরও সেবা মানুষকে যেন দিতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা ১১৮টি মেইল গাড়ি সংযোজন করেছি। তাছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য নারী-পুরুষ তাদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের পর আপনারা জানেন এখন বেশির ভাগই অনলাইন সেবা চলছে, ক্রয়-বিক্রয় চলছে। যেহেতু অনলাইন সেলিং জনপ্রিয়তা লাভ করছে কাজেই ডাকঘর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। ডাক বিভাগকে এই ব্যাপারে আরো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডাকঘরে কর্মরত ডাককর্মীদের সম্মানী ভাতা বাড়ানো প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ডাকঘরে কর্মরত ডাককর্মীদের সম্মানী ভাতা বাড়িয়েছি। ২০১৩ সালে এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল সাব পোস্টমাস্টার, এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল এজেন্ট, এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল ডেলিভারি এজেন্ট ও এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল মেইল ক্যারিয়ারদের নির্ধারিত মাসিক ভাতা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৬৫০ টাকা, ১ হাজার ২৬০ টাকা, ১ হাজার ২৩০ টাকা এবং ১ হাজার ১৮০ টাকা যা পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ২০১৮ সালে মাসিক ভাতা নির্ধারণ করে দিয়েছি যথাক্রমে ৫ হাজার ৮৪১ টাকা, ৪ হাজার ৪৬০ টাকা, ৪ হাজার ৩৫৪ টাকা এবং ৪ হাজার ১৭৭ টাকা।
ডাককর্মী সম্মানী আরও বাড়ানো প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, এটা ঠিক বর্তমান যুগে এ টাকাটা যথেষ্ট না। এই ক্ষেত্রে আমার মনে হয় ডাক বিভাগও কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে। যারা কাজ করছে তাদের কোনো ধরনের ইনসেনটিভ, ডাক বিভাগ যে লাভ করবে সেটার ছোট একটা অংশ ব্যবস্থা করতে পারে সেটা মনে হয় ভালো হয়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যেটুকু করার দরকার সেটা তো করবোই এবং আমরা করে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে।
এসময় ঢাকার আগারগাঁওয়ের ডাক ভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
আরবিসি/২৭ মে/ রোজি