ভোলাহাট প্রতিনিধি : মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা অল্প বৃষ্টিতে হাঁটু কাদা হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। ভোলাহাট উপজেলার প্রাচীণ সভ্যতার সম্ভাবনাপূর্ণ স্মৃতিচিহ্ন জঙ্গলবাড়ী ঢিঁপি যাওয়ার রাস্তায় ভয়ানক এ জনদুর্ভোগ।
রাস্তাটি দিয়ে হাজার হাজার বিঘা জমির ধান সবজি বাড়ি ও হাট-বাজারে টানেন কৃষকেরা। কিন্তু অল্প বৃষ্টিতে হাঁটু কাদা হওয়ায় বন্ধ হয় সকল চলাচল। ফলে কৃষকদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। এদিকে পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ স্থান জাগলবাড়ী ঢিঁপি দেখতে আসেন শত শত মানুষ। কিন্তু বছরের অধিকাংশ সময় কাদা থাকায় রাস্তাটি ব্যবহারের অনুপযোগি। কষ্টের শিকার হন পথচারীরা।
বরই চাষি বাদশা সবজি চাষি এহসান ধান চাষি হাকিমুল বলেন, অল্প বৃষ্টি হলেই মাত্র ১ কিলোমিটার রাস্তায় এক হাঁটু কাদা হয়ে যায়। যার কারণে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ফলে হাজার হাজার বিঘা জমির ধান-সবজিসহ অন্যান্য ফসল মাঠ থেকে তুলে আনতে চরম বিপদের মুখে পড়তে হয়।
রাস্তাটিতে মাঝে মধ্যে লাখ লাখ টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান মেম্বারেরা মাটি ভরাট করেন। আরো তাতে কাদার সৃষ্টি হয়। এতে সরকারি টাকা খরচ করেও মানুষের দুর্দশা লাঘব করা যায় না। রাস্তাটুকু পাকা করলে মিটবে হাজারো সমস্যা।
প্রত্নতত্ব গবেষক রবিউল ইসলাম বলেন, ঢিঁপিতে যত্রতত্র ছিটিয়ে রয়েছে গৌড়িয়া ইট। আছে পোড়া মাটি ফলকের ভগ্নাংশ। ইতোপূর্বে এ স্থানে অনেকে সোনার অলংকার কুড়িয়ে পেয়েছেন বলে কথিত আছে।
১৯৯২ সালে পুরাকীর্তির স্থানটির পাশে একটি ক্যানেল কাটার সময় বেশ কিছু প্রাচীণ তামা ও ব্রঞ্চের অলংকার পাওয়া যায়। কিংবদন্তি আছে ঐ স্থানে প্রচীন জনবসতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসিদ্ধ স্থান ছিলো। জাগলবাড়ীর পাশ দিয়ে এক সময় নদী প্রবাহিত হতো।
তিনি আরো বলেন, এ ঢিঁপির পশ্চিম পাশে বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল ‘বিলভাতিয়া’ অবস্থিত। ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, বহুপূর্বে এ এলাকার নদীগুলি ঘন ঘন গতিপথ পরিবর্তন করতো। নদীগুলি এভাবে পূনঃপূন তাদের পথ পরিত্যাগ করার ফলে এ অঞ্চলে প্রচুর নিম্ন জলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এখন তা ‘বিল’ হিসাবে পরিচিত। নদীর এসব পরিত্যাক্ত নিম্নভূমির মধ্যে ভোলাহাট উপজেলার দক্ষিণে অবস্থিত ভাতিয়ার বিল নামে সুবিশাল একটি বিল। বলতে গেলে এ বিলটির নাম প্রায় সকলেরই জানা।
প্রাচীণ সভ্যতার সম্ভাবনাপূর্ণ স্মৃতিচিহ্ন জঙ্গলবাড়ী ঢিঁপি যাওয়ার এ রাস্তাটি বহুদিন অবহেলায় পড়ে আছে। সরকারী ভাবে পাকাকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাস্তাটি দিয়ে জ্ঞান পিপাসুরা আসেন, কিন্তু চরম দুর্ভোগের শিকার হন তারা। রাস্তাটি পাকা হলে কৃষক ও পর্যটক উভয়ই সুফল পাবে।
দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল কাইউম জানান, ঐতিহাসিক স্থান জাগলবাড়ী যেতে ১ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। তাছাড়াও আশে পাশে রয়েছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি। অল্প বৃষ্টিতেই কাঁচা রাস্তাটি হাঁটু কাদা হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে দুর্ভোগে পড়েন। ঐতিহাসিক এ ঢিঁপিতে তখন আর দর্শনর্থীদের যাওয়ার উপায় থাকে না।
উপজেলার দলদলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আরজেদ আলী ভুটু জানান, জাগলবাড়ীর ১ কিলোমিটার রাস্তাটি জনগুরুত্বপূণ। কৃষকদের হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল তুলতে কষ্ট হয়। অন্যদিকে ঐতিহাসিক জাগলবাড়ী ঢিঁপি দেখতে যায় দর্শনার্থীরা। ফলে রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বলেন, দ্রুত পাকা করা উচিত জন গুরুত্বের এ রাস্তাটি।
আরবিসি/২৭ মে/ রোজি