স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাগমারার জোঁকাবিলে মাছচাষ নিয়ে আবারো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত করা ও স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি পক্ষ বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ করা হয়। এনিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান করছে।
এর আগে উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের জোঁকাবিলে মাছচাষ নিয়ে গত ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল প্রতিপক্ষের হামলায় মাছচাষ প্রকল্পের কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমানকে (৬০) নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় আরও সাতজন আহত হয়েছিলেন। হত্যার ঘটনা নিয়ে থানায় মামলা হলে পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও মৎস্যচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নরদাশ ও সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে জোঁকাবিলে স্থানীয় লোকজন মাছচাষ শুরু করেন। বিলে বিনামূল্যে ধানচাষ ছাড়াও কৃষকদের বিভিন্ন ধরণের সুবিধা দিয়ে জমির মালিকেরা মিলে প্রকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষ করে থাকেন। গত ২০০৪ সালে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান হাবিব প্রকল্পের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে তিনি হজে¦ যাওয়ার কারণে আনিসুর রহমান মৃধাকে দায়িত্ব দিয়ে যান। এদিকে বিলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত ২০১৮ সালে আনিসুর রহমানকে প্রতিপক্ষরা নৃশংসভাবে খুন করে। এই নিয়ে মামলাও হয়।
মাছচাষ অনিশ্চিত এবং আরও রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশংকা দেখা দেওয়াতে রাজশাহী তৎকালীন পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উভয় পক্ষের লোকজনের সঙ্গে সমঝোতায় বসেন। বৈঠকে সবার দাবির প্রেক্ষিতে সংঘাত এড়াতে ও সুষ্ঠুভাবে মৎস্যচাষ প্রকল্প পরিচালনার জন্য নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুর রশিদকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আব্দুর রশিদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও। আবদুর রশিদ কমিটির মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের পর কিছুদিন আগে সাবেক কোষাধ্যক্ষ আহসান হাবিবের নেতৃত্বে একটি পক্ষ বিশৃংখলার সৃষ্টি ও প্রকল্প পরিপন্থী কাজে জড়িয়ে পড়লে নিয়মানুসারে তাদের পাওনা টাকা অর্থ বুঝিয়ে দিয়ে বাদ দেওয়া হয়। এই গ্রুপে কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান মৃধা হত্যা মামলার কয়েকজন আসামিও রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্নভাবে বিশৃংখলা তৈরি ও বিলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে মাছচাষ মৌসুম শুরুতে আহসান হাবিবের নেতৃত্বে থাকা ১৫-২০জন ব্যক্তি গত ২২ মে বিলের একটি অংশ পাতিলে করে কিছু মাছের পোনা ছেড়ে দেন। তবে প্রতিপক্ষের দাবি মাছ নয়, পানি ঢেলে দিয়েছেন। এর কয়েকদিন পর পাল্টা মৎস্যচাষ প্রকল্পের সভাপতি আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে বিলে পোনার মজুত করা ও ছাড়া হয়। এর আগে বিলে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ করেন আহসান হাবিব পক্ষের লোকজন। এর ফলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ও মৎস্যচাষ প্রকল্পের সভাপতি আবদুর রশিদ জানান, তিনি প্রশাসন ও লোকজনের দেওয়া দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে পালন করছেন। কয়েকজন ব্যক্তি বিলের মাছচাষে বিশৃংখলা তৈরি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত। তবে বিলের জমির মালিক ও সাধারণ লোকজন সেটা হতে দিবে না। প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আনিসুর রহমান হত্যামামলার কয়েকজন আসামিসহ কয়েকজন ব্যক্তি আবারো উত্তপ্তকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। গত ২৪ মে রাতে বিলের একটি অংশে বিষদিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া কিছু মাছ মেরে ফেলেছে।
তবে আহসান হাবিব দাবি করেন, আগের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে জমির মালিকেরা মাছচাষ শুরু করেছেন। এজন্য মাছও ছাড়া হয়েছে। তিনি কোনো বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন না বলে জানিয়েছেন।
বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে পুলিশ কাজ করছে। কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে দমন করা হবে। তবে জোঁকাবিলের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পুলিশ দেখছে বলে জানান।
আরবিসি/২৬ মে/ রোজি