আরবিসি ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব এবং ভরা পূর্ণিমায় খুলনার নদ-নদীতে জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দু-তিন ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের পানির চাপে কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
স্থানীয়রা বাঁধ ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও তা বেশিরভাগ স্থানে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেছেন।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেল থেকে খুলনায় ঘণ্টায় ৫/৬ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। ইয়াসের প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। যা বুধবার ও বৃহস্পতিবার অব্যাহত থাকবে।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছাসহ নদী তীরবর্তী বেড়ীবাঁধের বাইরে ও বাঁধের কাছাকাছির বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। মানুষের মধ্যে জলোচ্ছ্বাস ও বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে কয়রা উপজেলার আংটিহারা, মঠবাড়ি লঞ্চঘাটের পশ্চিমপাশ ও একই এলাকার মোসলেম সরদারের বাড়ি সংলগ্ন ক্লোজার উপচে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। অপরদিকে গোবরা ঘাটাখালী, কয়রা সদরের তহশীল অফিস সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, দশহালিয়া, কাটকাটা, কাশিরহাটখোলা, দাকোপের নলিয়ান ও আন্ধারমানিক এলাকা, পাইকগাছার গড়ইখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ব্যাপক নাজুক অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় মানুষ বস্তা এবং মাটি দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীতে পানির স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ৩ মিটারের কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে আরও দু-তিন ফুট বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত বেড়িবাঁধগুলো চার মিটার পানির উচ্চতা ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম। তবে কোথাও কোথাও বাঁধের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তা অনেক নিচু অবস্থায় রয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পানির প্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা চলছে। আগামী দুদিনে পানির উচ্চতা আরও বাড়তে পারে। এর সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস হলে পানি আটকানো সম্ভব হবে না।’
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১১৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৫ লাখ মানুষ অবস্থান করতে পারবে।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আওতায় ৫ হাজার ৩২০ জন ও রেড ক্রিসেন্টের ৫০জন কর্মী দুর্যোগ মোকাবিলায় সহযোগিতা করবে। ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়া হলে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে শুষ্ক খাবার, অর্থ, চাল-ডাল প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আরবিসি/২৬ মে/ রোজি