• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

কঠোর লকডাউনে আম নিয়ে শঙ্কায় চাঁপাইয়ের চাষিরা

Reporter Name / ১০৫ Time View
Update : বুধবার, ২৬ মে, ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত এক সপ্তাহে হু হু করে বাড়ছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে মঙ্গলবার (২৫ মে) থেকে জেলায় কঠোর লকডাউন দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কঠোর লকডাউনের আওতায় জেলায় প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার আমচাষিরা।

তবে জেলা প্রশাসন বলছে- যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর কোনো প্রভাব পড়বে না আম বাজারে। স্বাভাবিক থাকবে আমবাজার, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সকল কার্যক্রম।

এদিকে গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম পাড়া হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই খিরসাপাত, হিমসাগর, মোহনভোগ, ক্ষুদি খিরসা, লক্ষ্মণভোগ, বোম্বাই জাতের আম পাড়া শুরু হবে। সে লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলার আমচাষি, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকরা।

 

তবে হঠাৎ করেই জেলাব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণায় কৃষকদের মনে নানা শঙ্কা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসনের সঠিক বার্তা না পৌঁছানো ও মাঠপর্যায়ে পুলিশের তৎপরতা দেখেই তাদের মনে এই শঙ্কা বলে মনে করেন সচেতন মহল।

গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আমচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে কঠোর লকডাউন চলছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি চলতে দেয় না পুলিশ। এভাবে লকডাউন হলে কীভাবে কোথায় আম বিক্রি করব? আশপাশের প্রায় সবার গুটি জাতের আম পাড়া হয়ে গেছে। ভাবছিলাম বুধবার থেকে আম পাড়া শুরু করবো। কিন্তু বাজারে আম নিয়ে যাওয়া নিয়ে মনের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।

কঠোর লকডাউনেও আম পরিবহনে কোনো বাধা নেই বিষয়টি জানেন কিনা, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা জানি ও দেখতে পাচ্ছি লকডাউন চলছে। কিন্তু আম পরিবহন বা বাজারজাতকরণে কোনো বাধা নেই- এমনটি জানা নেই। তার মতো অনেকেই এমন হতাশা ও আতঙ্কে ভুগছেন বলেও জানান তিনি।

ভোলাহাট উপজেলার আমচাষি সাদিকুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম কিনতে বেশিরভাগ ক্রেতাই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন। কঠোর লকডাউনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা আসতে পারবে না। এতে আম বিক্রি করা যেমন কঠিন হবে, তেমনি নায্যমূল্য পাবেন না আমচাষিরা। তাই বিষয়টি নিয়ে ভোলাহাটের আমচাষিরা উদ্বিগ্ন।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, জেলার বেশির ভাগ আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদার স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত। তাই আম বাজারজাতকরণ ও পরিবহন চলমান কঠোর লকডাউনের আওতায় নেই বিষয়টি সিংহভাগ আমচাষি জানেন না। তাই তাদের মধ্যে গত বছরের মতো ব্যবসা করতে না পারার একটা আতঙ্ক কাজ করছে। এ নিয়ে আমচাষিদের আরও সচেতন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসন কঠোর লকডাউনের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে আম বাজার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি আমচাষি, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকদের জন্য তেমন সুফল বয়ে আনবে না। কারণ এভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হবে না। এতে আমচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলা পর্যায়ের আম বাজারগুলোকে আরও বেশি মনিটরিং করা ও বাজারের পরিধি বাড়ানোই হবে যুক্তিযুক্ত।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। তবে জেলার প্রধান অর্থকরী ফল আমের বাজার চলমান রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আম বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে পরিবহনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আম পরিবহন নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। সরাসরি বাগান থেকে ট্রাকে আম পরিবহন করা যাবে। এছাড়াও অনলাইনে অর্ডার গ্রহণ করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকবে।

তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে হাট বাসানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন যেসব বাজার রয়েছে সেগুলোর আকার বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার (২৪ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ সংবাদ সম্মেলন করে এই কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় এ বছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আম বাগানের প্রায় ২৭ লাখ গাছ থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

আরবিসি/২৬ মে/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category