তানোর প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোরে এক প্রতিবন্ধী আদিবাসী নারী জীবিত থাকার পরও তাকে মৃত দেখিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই বাক প্রতিবন্ধী নারী জন্ম থেকে কথা বলতে পারে না। তার নাম মার্শিলা সরেন (৩২)।
তার বাবা সুপল সরেন ও মা ফুলমনি মূর্মূ মারা যাবার পর থেকে বড় ভাই জুয়েল সরেনের অভাবের সংসারে থাকেন মার্শিলা। মার্শিলা সরেনের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের যোগীশো আদিবাসী পাড়ায়। মার্শিলার জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ দেয়া হয়েছে ১২ অক্টোবর ১৯৮৮ সাল পরিচয় পত্র নম্বার ৮১১৯৪৭০৭৮১৪৯২। সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পরিশোধ বই সূত্রে জানা গেছে, মার্শিলা সরেন ২০১৯ সাল এবং ২০২০ সালে জুলাই হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ২২৫০ টাকা করে প্রতিবন্ধীর ভাতা পেয়েছেন। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহনের বই ৯২৩। ব্যাংক হিসাব নং ২৫৭। ২০২১ সালে তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। ফলে সে ২০২০ সালের জুলাই হতে সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে আর কোন প্রতিবন্ধী ভাতা পায়নি।
মার্শিলার সরেনের বড় ভাই দিনের পর দিন তানোর সমাজ সেবা অফিসের ঘুরে বোনের প্রতিবন্ধী ভাতার বিষয়ে কোন সূরোহা করতে পারেন নি।
গতকাল সরজমিনে যোগীশো আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, দুপুর বেলা রোদের মধ্যে মার্শিলা সরেন বসে আছেন। কথা হয় তার বড় ভাই জুয়েল সরেনের সাথে। তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। অভাবের সংসার আমাদের। কাজ না করলে পেটের ভাত জোটে না। বাবা-মা মারা যাবার পর থেকে মার্শিলা আমি ও আমার রৌ দেখবাহাল করি। ছোটের বোনের প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে অফিসের বড় বাবু রা। আমার বোন নাকি মরে গেছে।
আমার বোন জীবিত আছে এ মর্মে পাঁচন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে একটি প্রত্যায়নপত্র দিয়েছে। কিন্তু সমাজ সেবা অফিসের বড় বড় বাবু রা বলছে আমার বোন মরে গেছে। ভোটার তালিকায় তোমার বোনের নাম নেয়। সেজন্য তোমার বোনের প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।
তানোর উপজেলা পাঁচন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার যোগীশো গ্রামের মার্শিলা সরেন জীবিত আছে। এ মর্মে আমি মার্শিলার ভাই জুয়েল সরেনকে প্রত্যায়ন দিয়েছি। আমার পরিষদ থেকে মার্শিরা সরেনকে মৃত ঘোষণা করিনি তাহলে সমাজ সেবার কর্মকর্তারা কিভাবে তাকে মৃত বলেন। সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তারা এরজন্য দায়ি।
তানোর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা হোসেন খান বলেন, ভোটার তালিকায় মার্শিলা সরেনের নাম নেয়। তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। সেজন্য তার প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। তাহলে ইতেপূর্বে মার্শিলা সরেন কিভাবে ভাতা তুললেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে কি ভাবে প্রতিবন্ধীর টাকা উত্তোলন করেছে আমার জানা নেই। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে সব দেখে ভাতা প্রদান করা হয়। নির্বাচন অফিসকে বলুন বিষয়টি ঠিক করতে।
তানোর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সুমমিতা রায় বলেন, কোন ভাবে মার্শিলার নামটা তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে। আবেদন করতে হবে। তা না হলে চুপ করে বাড়িতে বসে থাকতে হবে।
তানোর উপজেলা নিবার্হী অফিসার পংকজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখবো।
আরবিসি/২৫ মে/ রোজি