স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগী আবার বাড়ছে। এই হাসপাতালের মোট করোনা রোগীর অর্ধেকই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্ধেক রোগীই ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ উপজেলার।
তাদের কেউ সম্প্রতি ভারত থেকে এসেছেন কি না, করোনার ভারতীয় ধরন বহন করছেন কি না, তা নির্ণয়ের জন্য কর্তৃপক্ষ তৎপরতা শুরু করেছে। এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাঁপাইনবগঞ্জে চলমান লকডাউন কড়াকড়িভাবে পালন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে করোনা ওয়ার্ডে ১৩৫ জন রোগি ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাকিদের করোনা উপসর্গ রয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও করোনা আক্রান্তদের মধ্যে আইউসিইউতে রয়েছেন ১২ জন। রোগিদের মধ্যে অর্ধেকের বেশী চাঁপাইনবাবগঞ্জের।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার জন করোনা আক্রান্ত রোগির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে একজন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনজন মারা গেছেন। শুক্রবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভাগের আট জেলায় এ পর্যন্ত ৫২৪ জনের মৃত্যু হলো করোনায়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৮ জন মারা গেছেন রাজশাহীতে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ জন, নওগাঁয় ৩৭ জন, নাটোরে ২০ জন, জয়পুরহাটে ১১ জন, সিরাজগঞ্জে ২৩ জন এবং পাবনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিভাগে নতুন ১৬৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এ দিন বিভাগের ৮৩ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। বিভাগে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৪৯৫ জন। এদের মধ্যে ৩০ হাজার ৫৫৯ জন সুস্থ হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ৭৫১ জন কোভিড-১৯ রোগী।
সূত্রমতে, গত ১৯ মে এই হাসপাতালে ১২৬ করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৬৬ জনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। মাত্র তিনজন রয়েছেন নাটোরের। রাজশাহীর রোগীও কম। তুলনামূলক চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগী এত বেশি হওয়ার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিন্তায় পড়েছে। ঈদের আগে এই হাসপাতালে করোনা রোগী কমার পর আবার বাড়তে শুরু করেছে।
হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, ৭ মে এই হাসপাতালে করোনা রোগীর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৫৭ জন। ঈদের ঠিক আগে ও পরে আবার রোগী বাড়তে শুরু করে। ঈদের আগে ১২ মে রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৭ জন। ঈদের পর থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ রোগী ভর্তি হন। ১৭ মে ৩৯ রোগী ভর্তি হন।
এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগী সবচেয়ে বেশি আসছেন। ১৮ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জনকে পজিটিভ পাওয়া যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যে ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা শিবগঞ্জের রোগী সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলার ৩১ করোনা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আইসিইউতে গত বুধবার ১৪ রোগী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আটজনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। এ পরিসংখ্যান হাসপাতালের চিকিৎসকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই রোগীদের অনেকেই ভারত থেকে এসেছেন। কিন্তু কেউই তা স্বীকার করছেন না। এ জন্য ঢাকায় তাঁদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। এ পরীক্ষায় দেখা হবে, তাঁদের মধ্যে কেউ করোনার ভারতীয় ধরন বহন করছেন কি না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভারতীয় সীমান্তবর্তী একটি ছোট জেলা। এ জেলা থেকেই বেশি রোগী আসছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, চাঁপাইানবাবগঞ্জে এ পর্যন্ত ২০ করোনা রোগী আছেন। তার মধ্যে ১৮ জন সদর হাসপাতালে, ১ জন নাচোল ও ১ জন গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
তিনি বলেন, ঈদের পরই রোগী বেড়েছে। তার মধ্যে ঢাকা থেকে আসা এবং তাঁদের সংস্পর্শে যাওয়া রোগীই বেশি। শুধু একজন রোগী পাওয়া গেছে, যিনি ভারত থেকে এসেছেন। তিনি ভারতে চিকিৎসা শেষে ১৮ এপ্রিল বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন। ২৪ এপ্রিল পরীক্ষায় তাঁর করোনা শনাক্ত হয়।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, বৃহ্স্পতিবার ভারত থেকে ২৪ বাংলাদেশি দেশে ঢুকেছেন। তাঁদের সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনকে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ৩ জনকে সদর হাসপাতালে ও ৭ জনকে একটি হোটেলে রাখা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছু সিদ্ধান্ত হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা রোগী নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে রোগীদের কেউ গোপনে সীমান্তপথে ভারত থেকে এসেছেন কি না। এ জন্য জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীরা কেউ ভারতীয় ধরন বহন করছেন কি না, রাজশাহীতে তা পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাঁরা তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যাবে কেউ করোনার ভারতীয় ধরন বহন করছেন কি না।
আরবিসি/২১ মে/ রোজি