স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাগমারায় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্রিজ-কালভাট ও স্লুইজ গেট বন্ধ করে মাছ চাষের অভিযোগ ওঠেছে। উপজেলার প্রায় শতাধিক স্থানে অবৈধ ভাবে ব্রিজ-কালভাট ও স্লুইজ গেট বন্ধ করে মাছচাষের কারণে পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে করে বর্ষ মওসুমে পানিবদ্ধতায় আবাদি জমি ও বাড়ি-ঘর হুমকিতে পড়ে আবার বর্ষার শুরুতে বিল এলাকায় পানি প্রবেশে বাঁধার সৃষ্টি হয়।
পানি প্রবাহের এ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে এর আগে স্থানীয় ভুক্তভোগী মহল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেও কোন সুরাহা পায়নি। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক পর্যন্ত গড়িয়েছে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি আমলে নিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওই সব ব্রিজ কালভাট ও স্লুইস গেটের বন্ধ মুখ খুলে দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে তার উপস্থিত এ প্রতিনিধির কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাগমারায় এই সমস্যাটি মারাত্বক আকার ধারন করেছে। বিশেষ করে পশ্চিত বাগমারার অনেক স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিল এলাকার ব্রীজ কালভাট ও স্লুইস গেটের মুখ বন্ধ করে ইচ্ছামত বিল দখল করে সেখানে মাছ চাষের মহোৎসব শুরু করেছে। এতে পানির স্বাভাবিক গতি প্রভাহ বন্ধ হয়ে পড়ায় ওই সব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্বক আকার ধারন করছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল কঠোর হস্তে দমনের নির্দেশ দিয়েছে এবং ১৫ দিনের মধ্যে তিনি এর বাস্তবায়ন দেখতে চেয়েছেন।
অভিযোগ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর, বালানগর, দেউলিয়া, সগুনা গ্রামের মধ্য দিয়ে গোপালপুর হয়ে একটি দাঁড়া (ক্যানেল) ফকিরনী নদীতে পড়েছে। বর্ষা মওসুমে দাঁড়া দিয়ে পানি নামলেও শুষ্ক মওসুমে এ নীচা জমিতে ফসল ফলে। এছাড়া যুগ যুগ ধরে গণিপুর ইউনিয়নের পুড়াকয়া, মাধাইমুড়ি, আক্কেলপুর বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর, বালানগর, সগুনা, গোপালপুরসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন নিয়ে ১৫-১৬টি গ্রামের নীচু এলাকার পানি নামার এই দাঁড়ায় পানি প্রবাহিত হয়। পানি নিষ্কাশনের কোন বিকল্প পথ না থাকায় বর্ষাকালে এলাকার পানি নদীতে যাবার একটি মাত্র পথ।
সম্প্রতি প্রভাবশালী মহল সগুনা গ্রামের নিকট রাস্তার উপর কালভাট, পোড়াকোয়া গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত রাস্তার উপর ব্রিজ, বালানগর রাস্তার উপরের ব্রিজসহ কয়েকট ব্রিজ-কালভাটের মুখ বন্ধ করে দিয়ে মাছচাষ করায় পানি প্রবাহে রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়েছে। অভিযোগকারী সগুনা গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী জানান, গত আষাঢ় মাস অধিক বৃষ্টিতে নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর ভরে যায়।
টানা বর্ষনে নদ-নদী, খাল-বিল পুকুর পরিপূর্ণ হয়ে পানি নামার অব্যবস্থাপনায় বৃষ্টিতে নিম্ন অঞ্চলের ধান ও পাট, পানবরজ, মরিজ, শাক-শবজির ক্ষেত তলিয়ে কৃষককের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বাসুপাড়া ইউনিয়নের মোহম্মাদপুর গ্রামের আবু সাঈদ, আব্দুল কুদ্দুস, হাতেম আলী, সাহেব আলী ও সগুনা গ্রামের আব্দুল করিম, নূর মোহম্মাদ মোজ্জাফর হোসেনসহ অর্ধশত কৃষক জানান, গ্রামের পাশ দিযে বয়ে যাওয়া দাঁড়িতে অন্ত ১৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে করে পানি প্রবাহের জায়গা বন্ধ হয়ে আশেপাশের জমিতে গত বর্ষায় ব্যাপক ক্ষতি সন্মুখীন হয়েছেন তারা।
অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পানি নামতে না পেরে তার জমির ধান, পানবরজ, শবজি ক্ষেত গত বর্ষা মওসুমে ডুবে গেছে। এতে গত বছর এলাকার ৩ কোটি টাকার ফসলের হানি হয়েছে। ফসলি জমিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মোহম্মাদপুর, সগুনা, দ্বীপনগর, মাধাইমুড়ি, বালানগরসহ উপজেলার শত শত বিঘা বেশী ভাগ জমি অকেজ হয়ে পড়ে থাকছে।
সগুনা গ্রামের কৃষক শিহাব উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, রমজান আলী, বাবুসহ শতাধিক কৃষক দাবি করে জানান, এ স্থানীয় সাইপাড়া গ্রমের পুকুর ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান, দেউলা গ্রামের আমজাদ হোসেন, রহিদুল ইসলাম, ভবানীগঞ্জ এলাকার আজাহার আলী, নন্দনপুর গ্রামের বাবুল, সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুল জব্বারসহ ৭-৮ জন প্রভাবশালী পুকুরের ব্যবসার নামে পানি প্রবাহিত দাঁড়ি (খালে) বাঁধ দিয়ে পুকুর সৃষ্টি করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে মাছচাষ শুরু করেছে। মাছ চাষের নামে মাথা ভাঙ্গা কালভাট, গোপালপুর-দেউলিয়া সড়কের স্লুইজ গেট, বালানগরের দয়ের কালভাট, মোহম্মাদপুর সগুনাসহ অন্তত ৬-৭ ব্রীজ-কালভাট পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রভাবশালীরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করেছে বলে তার দাবি জানান। তারা বলেন, প্রভাবশালীদের হাত থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও ফসলি জমিতে নিয়ম বর্হিভূত অপরিকল্পিত পুকুর খনন বন্ধের জন্য এক সময়ে দফায় দফায় ভুক্তভোগী কৃষকরা স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লি¬ষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের লিখিত আবেদন করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অবৈধ কৃষি জমিতে পুকুর খনননের অভিযোগে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিলের মুখে কালভাট-ব্রিজ বন্ধ করে মাছচাষের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অচিরেই এ অভিযান আমরা শুরু কররো। এসব বাধা অপসারণের যাবতীয় ব্যয়ভার ওই সব দখলকারীকে বহন করতে হবে। এ ব্যাপারে তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, রাজশাহীর ৯ উপজেলায় কমবেশি এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আগামী ৩১ মে এর মধ্যে অবৈধ ভাবে ওইসব ব্রিজ কালভাট ও স্লুইস গেটের বন্ধ মুখ খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছি। ওই সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ দখলকারীকে বহন করতে হবে।
এছাড়া ১ জুনের পর থেকে আর কোন ব্রিজ কালভাট ও স্লুইস গেটের মুখ বন্ধ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আরবিসি/২০ মে/ রোজি