• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন

শেখ হাসিনা : অর্জন আর বিজয়ের ঠিকানা

মোহাঃ আসাদুজ্জামান আসাদ / ৭২৭ Time View
Update : রবিবার, ১৬ মে, ২০২১

প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ এক সময় বিদেশী বেনিয়াদের শোষণ ও নীলকরদের অত্যাচারের শিকার, কখনও বৃটিশের জুলুমে নিষ্পেষিত, এরপর সাধের পাকিস্তান আমাদের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। বাঙালীর উপর জুলুম- নির্যাতন, অত্যাচার, শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের আত্ম বলিদান ২ লক্ষ মা-বোন এর সম্ভ্রম আর নরক যন্ত্রনার সাগর পাড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জন করলাম লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলার পোড়া-মাটি ও নির্যাতিত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে দেশ পূর্ণগঠনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন ঠিক তখনই পাকিস্তানী হায়েনার দোসর মোস্তাক-জিয়ার ষড়যন্ত্রে ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডে থমকে দাঁড়ালো বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধাক্কা খেলো। রাষ্ট্র-ক্ষমতায় বেঈমান ঘাতকদের দলপতি জিয়ার নেতৃত্বে রাজাকার-আলবদরদের দল প্রধানরা।

দিকহারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ, লক্ষ্যহীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, দিশাহীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এমন এক বিভ্রান্ত সময়ে ১৯৮১ সালে ১৭ মে ঢাকার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন সন্ধ্যা নামার আগে সূর্য ঢাকা পড়েছে ঘন কালো মেঘে, মাঝে মধ্যে দমকা ঝড়ো হাওয়া জানান দিচ্ছে, যে কোনো সময়ে আকাশ ভেঙ্গে নামবে বৃষ্টি এমন এক গোমট পরিবেশের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিশ্বাসীদের রাজনৈতিক আকাশে আরেক সূর্যের আলোক ছটা হাজারো দুঃখ কষ্ট যন্ত্রনাকে ধারণ করে পিতা-মাতা ভাই আত্মীয় স্বজন হারানোর বেদনাকে সাথী করে প্রায় ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আত্মা কন্যা শেখ হাসিনার দেহে প্রবেশ করে বাংলাদেশে পদার্পণ করলেন। ঝড়ের পাগলা নৃত্য, মেঘের গর্জন, আর শান্তির বারিধারার মাঝে শতকোটি কণ্ঠে উচ্চারিত স্লোগান “হাসিনা তোমার ভয় নাই, আমরা আছি লাখো ভাই, ঝড় বৃষ্টি আধাঁর রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু” স্লোগানে মুখরিত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় অভিসিক্ত হয়ে পিতার মত উচ্চারণ করলেন “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দারিদ্র-পিড়িত মানুষের মুক্তির জন্য পিতার মত জীবন দিতে হলেও দিবো কিন্তু অধিকার প্রতিষ্ঠা করবই করবো ইনশাআল্লাহ্।”
সেই যে পথ চলা শুরু ১৯৮১ সালের ১৭ই মে থেকে ১৯৯৬ সালের জুন, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম, কারাবাস আর বারবার হত্যা চেষ্টার জাল ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বুনেছেন শেখ হাসিনা। তিনি জানেন তার পিতা পোড়া-মাটি আর গৃহহীন, আশ্রয়হীন, দারিদ্র, পীড়িত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ স্বদেশ গড়ার যে যাত্রা শুরু করেছিলেন মাঝখানে ২১ বছর বাংলাদেশ পেছনের দিকে হেটেছে, সেই বিপরীতমুখী অবস্থান থেকে যথা সময়ে যথা সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারঙ্গম শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ঘোষণা করলেন ‘আমি শাসক নয়, সেবক হিসেবে দেশের মানুষের সেবা করে প্রায় মেরুদন্ড ভেঙ্গেপড়া বাংলাদেশকে উন্নত আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে চাই’। একের পর এক সাফল্য অর্জনের মধ্য দিয়ে জনগণের সমৃদ্ধি ভালোবাসা আর ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা ২০০১ এর নির্বাচনে আবার ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হলেন, বাংলার মানুষের উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির রথযাত্রা থমকে গেলো ষড়যন্ত্রের কাছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে ‘৭১ আর ৭৫’ এর খুনিদের কর্ণধার খালেদা-নিজামীর নির্মম রাজনৈতিক নির্যাতন, সন্ত্রাস, লুটপাট, বাংলাভাই নামক ধর্মের নামে জঙ্গী সৃষ্টি করে একযোগে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা, হত্যা, সন্ত্রাস, দূর্ণীতি আর লুটতরাজের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে দেশকে। তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ৫ বছরেই বাংলাদেশ দূর্ণীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। অপর দিকে রাষ্ট্রীয় মদদে ২১ আগষ্ট দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা, হাজার হাজার আহত নেতাকর্মীর আর্তনাদ ও রক্তশ্রোত পৃথিবীর অন্যতম নারকীয় ঘটনা।

নির্যাতন-নিপীড়ন ও খুন, গুম, দূর্ণীতি মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি দূর্ণীতিতে চ্যাম্পিয়ন। লাগাতার দূর্ণীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা যখন ক্ষুন্ন ঠিক তখনই অদ্যম সাহসিকতার সাথে শেখ হাসিনা বি.এন.পি-জামাতের সমস্ত অপকর্মের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের বিজয় সুচিত করেন, কিন্তু আবার নতুন ষড়যন্ত্রের মইনুদ্দীন-ফকরুদ্দীনের নেতৃত্বে অনিশ্চয়তার চোরাবালিতে নিপতিত হলো দেশ জাতি। জেল-জুলুম হুলিয়া হত্যার হুমকি দু’পায়ে দলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অধিকার আদায়ে সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে প্রায় ২ বছর পর এই জগতদল পাথর অপসারিত করে নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৮ আবার দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেবকের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে অদ্যবধি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মহাসড়ক ধরে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলেছে। রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গুণে অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি, ভারতের সাথে ৩০ বছরের পানি চুক্তি, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ভেঙ্গে পড়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পূর্ণ:গঠন, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে জলসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি, বিনামূল্যে বই বিতরণ, ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, কৃষি, ভূমিহীন দুঃস্থ মানুষদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে তাদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা, শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বয়স্ক, বিধবা, শিক্ষাভাতা সহ গৃহহীনদের গৃহ প্রদান, আশ্রয়হীন আশ্রয় প্রদান, বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম পদ্মাসেতু নির্মাণ, সড়ক, মহাসড়ক, উড়াল সড়ক, রেল, মেট্রোরেল, আকাশপথ-পানিপথ সহ যোগাযোগের সকল মাধ্যমে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৃথিবীতে এক অনন্য রেকর্ড স্থাপন করার একমাত্র কারিগর রাষ্ট্র নায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

অপরদিকে ‘৭১ এর খুনি রাজাকার আলবদর সরদারদের বিচার করে ফাঁসির রায় কার্যকর করা ‘৭৫ এর বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং জেলখানায় জাতীয় চার নেতার খুনিদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে কলঙ্কমুক্ত করে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ করেন। দৃঢ় অবস্থান, অসীম সাহসিকতা ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্ব গুণে ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং জাতিসংঘের ইউনিসকো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণের মর্যাদা লাভ করায় বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত যার কারিগর রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, চিন্তাশীল ভাবনা নিদর্শন “রাষ্ট্রের উন্নয়ন দর্শন” জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ এই “রাষ্ট্র উন্নয়ন দর্শন” গ্রহণ করায় শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত আর বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে প্রশংসিত। এই অর্জন আর বিজয়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ, কারা অন্তরীণ হতে হয়েছে কমপক্ষে ৮ বার। ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। শতশত নেতাকর্মীর জীবনদান, লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর এই আত্মত্যাগে তিনি হয়েছেন আরও কঠোর তেজোদৃপ্ত শপথে নেতাকর্মীদের রক্ত-রঞ্জিত পথে সমস্ত ষড়যন্ত্রের পথ পাড়ি দিয়ে সত্য ও সুন্দরকে ধারণ করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত যার প্রমাণ বিশ্বের বিভিন্ন ৩৯টি দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩৯টি ডিগ্রি, পদক, সম্মাননাতে ভূষিত হন। এ থেকে নিঃসংকোচে বলা যায় আজ থেকে ৪০ বছর পূর্বে পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বাংলায় ফিরে জননেত্রী হয়েছেন। জননেত্রী হিসেবে মানুষের দোয়া, ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাসে রাষ্ট্র নায়ক হয়েছেন, রাষ্ট্র নায়ক থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব, সততা, যোগ্যতা ও কর্মগুণে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কোটি মানুষের দোয়া ভালোবাসায় সিক্ত, আমাদের বিশ্বাস, ভরসা অর্জন আর বিজয়ের ঠিকানা শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, ধন্য পৃথিবী, তিনি নিজ কর্মগুণে শত কোটি মানুযষের দোয়া আর ভালাবাসায় সিক্ত, পিতার আত্মা তিনি নিজ দেহে বহন করে, পিতার পথে হেঁটে নিজে হয়েছেন গর্বিত, অপরাজিতা, অপ্রতিরোধ্য নেতৃত্ব, তিনিই আমাদের শেখ হাসিনা অর্জন আর বিজয়ের ঠিকানা।

লেখক; রাজনীতিবীদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ।

আরবিসি/১৭ মে/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category