মান্দা প্রতিনিধি: কালবৈশাখীর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। একই সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানসহ মৌসুমী ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ১ টার ৪০ মিনিটের দিকে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর এ তান্ডবে ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা।
ঝড়ের তান্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা-পাকা বাড়ি। উড়ে গেছে ওইসব বাড়ির টিনের ছাউনি। তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে পুরো এলাকা। গাছ পড়ে ও টিনের ছাউনি উড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দক্ষিণ মৈনম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
ঝড়ের তান্ডবে বর্দ্দপুর মোল্লাপাড়া গ্রামের তাইজুল ইসলামের পাকাবাড়ির টিনের পুরো ছাউনি উড়ে গেছে। মৈনম ফকিরপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেনের দোতালা বাড়িতে বিশাল আকৃতির একটি পাইকড় গাছ উপড়ে পড়ে দুইটি কক্ষ ধসে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ দুলাল হোসেন জানান, সোমবার রাতে হঠাৎ করেই ঝড় প্রচন্ড বেগে আঘাত হানে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাড়ির পাশে থাকা পাইকড় গাছটি তার ঘরের ওপর আছড়ে পড়ে। এসময় তারা খাটের নিচে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পান।
আরেক ক্ষতিগ্রস্থ তাইজুল ইসলাম জানান, এবারে ইট ও টিন দিয়ে নতুন বাড়ি নির্মাণ করেন। ঝড়ের তান্ডবে তার বাড়ির টিনের পুরো ছাউনি উড়ে চলে গেছে। এসময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিলাবৃষ্টির মধ্যেই তাদের দুর্বিসহ সময় পার করতে হয়েছে। বৃষ্টিতে ধান-চালসহ পরিবারের সমুদয় আসবাবপত্র ভিজে গেছে।
ইউনিয়নের নলকুড়ি গ্রামের কৃষক আফসার আলী জানান, মাঠে কাটার উপযুক্ত দেড় বিঘা জমির বোরো ধান শিলাবৃষ্টিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। নলকুড়ি, রায়পুর, বর্দ্দপুর, উত্তর ও দক্ষিণ মৈনম মাঠের কাটার অপেক্ষায় থাকা বোরো ধানের খেত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
স্থানীয়রা জানান, রাত ১ টা ৪০ মিনিটের সময় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। একই সময় প্রচুর পরিমাণে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ১০ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে চলে যায়। মৌসুমী ফল আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কলাবাগান, পেঁপেবাগান, পটল, বেগুন, কচুসহ বিভিন্ন সবজির খেত চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঈদের আগ মুহুর্তে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা কৃষকদের জন্য কষ্টকর বলেও দাবি করেন তারা।
মৈনম ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী দেওয়ান ওয়ালি হোসেন পিন্টু জানান, সোমবার রাতে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর তান্ডবে ইউনিয়নের রায়পুর, বর্দ্দপুর, উত্তর ও মধ্য মৈনম, ললিতপুর, নলকুড়িসহ কয়েকটি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়েছে। বাড়িঘরসহ কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে সহায়তা প্রদানের জন্য উপজেলা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
মৈনম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়াচিন আলী রাজা বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশনায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে দাখিল করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ইউএনও আব্দুল হালিম বলেন, বিষয়টি অবহিত হয়েছি। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে সহায়তা প্রদান করা হবে।
আরবিসি/১১ মে/ রোজি