স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাঘায় বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই গাছ থেকে অপরিপক্ক আম নামিয়ে বাজারজাত করণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমের আগাম বাজার ধরতে এলাকার অসাধু কিছু ব্যবসায়ী বেশি দামের আশায় অপরিপক্ক আম গাছ থেকে নামিয়ে বাজারজাত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এসব আমের রঙ ও পাঁকানোর জন্য রাসায়নিক ক্যামিকেল ব্যবহার করা হচ্ছে ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই গত ৭ মে (২০২১) গাছ থেকে লকনা ও গুটি জাতের আম নামান উপজেলার তেপুকুরিয়া গ্রামের মনির ও মমিনুল। বাজারজাত করণের জন্য সেই আম সন্ধ্যার পর রাসায়নিক ক্যামিকেল ‘স্প্রে’ করে প্লাষ্টিকের ক্যারেটে (ঝুরি) মোড়কজাত করছিলেন তারা। বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীকে জানান, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ মোহাঃ বৃটেন। তিনি বলেন, প্রায় ৮০ ক্যারেট (ঝুরি) আম হবে। যার মধ্যে অর্ধেক লকনা ও অধেক গুটি। মনির ও মমিনুল তেপুকুরিয়া গ্রামের নইর প্রামানিকের ছেলে।
সরেজমিন, ব্যবসায়ী মিলনের সাথে কথা হলে, অপিরপক্ক আম নামানোর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ২০ ক্যারেটের মতো আম নামিয়েছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিম ও যুবলীগ নেতা বৃটেনসহ অনেকের উপস্থিতিতে এ কথা বলেন মিলন। তার সেই আমগুলো দেখতে চাইলে যুবলীগ নেতা বৃটেনের সাথে কথা বলার ভান করে সটকে পড়েন।
এর আগে উপজেলা নির্বাহি অফিসার পাপিয়া সুলতানা ও বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলামকে বিষয়টি জানান গণমাধ্যম কর্মী। তাদের ধীরগতিতে আম সরিয়ে ফেলে সবকিছু সামলে ফেলে আম ব্যবসায়ী।
ইউপি সদস্য রেজাউল করিম জানান, সাংবাদিরা যাওযার আগে প্রশাসনের কেউ সেখানে যাননি। পরে আবারো বিষয়টি থানার কর্মকর্তাকে জানানো হলে, পুলিশ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা অথবা এসিল্যান্ড মহাদ্বয়কে অবগত করে তাদের সহায়তা কামনা করেন। এরপর এসিল্যান্ডকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি নির্বাহি অফিসারের সাথে কথা বলতে বলেন। নির্বাহি অফিসারকে ফোনে পুরো ঘটনা বলা হলে বিষয়টি দেখছি বলে জানান। এর পরে তেপুকুরিয়া গ্রামে যায় পুলিশ । কিন্তু দুই ভাইয়ের কাউকে না পেয়ে ফিরে আসে ।
নির্বাহি অফিসার পাপিয়া সুলতানা জানান, সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মাঝে জানতে পারেন তারা আগেই আমগুলো সরিয়ে ফেলেছে। একথা জানার পর সেখানে যাওয়া হয়নি। তবে আগামীতে যে সকল ব্যবসায়ী নির্ধারিত সময়ের আগে অপরিপক্ক আম নামিয়ে বাজারজাত করণের জন্য রাসায়নিক ক্যামিকেল ব্যবহার করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
এ দিকে অপরিপক্ব আমের বাজারজাত ঠেকাতে গেল কয়েক বছর ধরেই রাজশাহীতে আম নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। এবারও সিদ্ধান্ত নিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে অনলাইন প্লাটফর্মে জুমমিটিং করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৬ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আব্দুল জলিলের সম্মেলন কক্ষে তার সভাপতিত্বে আয়োজিত এক বিশেষ সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৫ মে থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া শুরু হবে। তবে কোনো আম আগে পাকলে স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে। এরপর পরিদর্শন শেষেই গাছ থেকে নামানো যাবে আম।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার আগামী ১৫ মে থেকে আম নামাতে পারবেন চাষিরা। আর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৫ মে থেকে এবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো যাবে। এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম।
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বলেন, গত কয়েক বছর থেকে আম নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণে ঢাকাসহ সারাদেশের ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তারা নিশ্চিত ছিলেন যে, কোনো রাসায়নিক মিশিয়ে রাজশাহীর আম পাকানো হয়নি, এটা প্রাকৃতিকভাবেই পেকেছে। ফলে রাজশাহীর আমের সুনাম অক্ষুণ্ন ছিল। তাই এবারও থাকবে। তিনি বলেন, অপরিপক্ব আম নামাতে না পারেন সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হতো। কিন্তু এতো জনবলও তাদের নেই। সব দিক বিবেচনায় আম নামানোর ক্ষেত্রে তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হলো। তবে আগে পাকলে অবহিতকরণের মাধ্যমে আম নামানোরও সুযোগ রয়েছে। তবে এ নিময় না মেনে আগে ভাগেই গাছ থেকে অপরিপক্ক নামান উপজেলার তেপুকুরিয়া গ্রামের নইর কসাই’র আম ব্যবসায়ী দুই ছেলে মনির ও মমিনুল। তারা গত বছরও একই কাজ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা দিয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসি। এবারও ঠিক একই কাজ করলো।
আরবিসি /০৯ মে/ রোজি