স্টাফ রিপোর্টার : সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সন্ধ্যা খাতুনের সঙ্গে তার মা নীলা বেগমও এসেছিলেন। মেয়ের পক্ষে তিনিই হাতে নেন ঈদ উপহার সামগ্রীর প্যাকেট। এ সময় তাঁর চোখ দুটি পানিতে টলমল করে ওঠে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে পরিচালিত পাঠশালা-রাজশাহীর মাঠে সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় গতকাল শুক্রবার (৭ মে) শিক্ষার্থীদের মাঝে করোনাকালীন ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশ কিছু অভিভাবকও এসেছিলেন।
উপহার সামগ্রী হিসেবে পোলাও এর চাল, ভাতের চাল, চিনি, সেমাই ও সোয়াবিল তেলের একটি প্যাকেট শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১৪০ জন শিক্ষার্থী এই উপহার পায়।
নীলা বেগমের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুরে। তার স্বামী শহীদ ঘোষ চর থেকে দুধ কিনে রাজশাহী শহরে এসে বিক্রি করেন। করোনাকালে তার সেই ব্যবসায়ে ভাটা পড়েছে। চার মেয়েসহ ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে শহীদ ঘোষ পড়েছেন বিপাকে। আলোর পাঠশালা থেকে তার মেয়ে ঈদ উপহার সামগ্রী পাবে, তাই মেয়ের সঙ্গে মাকেও পাঠিয়েছেন।
উপহার পেলেন, আনন্দ পাওয়ার কথা। চোখে পানি কেন, জানতে চাইলে নীলা বেগম বলেন, প্রায় না খেয়ে দিন যাচ্ছে। ঈদের উপহার ঈদ পর্যন্ত তো আর থাকবে না। তার আগেই খেয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই।’
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোবাশ্বেরা খাতুনের পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার একমাত্র ভাই। তিনি পদ্মা নদীতে যাঁরা ঘুরতে আসেন, তাদের নৌকায় নিয়ে বেড়ান। তা থেকে যা ভাড়া পান তাই দিয়ে সংসার চলে। মোবাশ্বেরা জানায়, এই করোনাকালে কেউ পদ্মায় বেড়াতে আসে না। ভাইয়ের নৌকাও চলে না। তাদের খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। এবার ঈদের চিনি সেমাই কেনার মতো তাদের সামর্থ্য নেই। আলোর পাঠশালার এই উপহার সামগ্রী দেখলে মা খুব খুশি হবেন।
বিদ্যালয়ে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে রাজশাহী শহরে শাটারিং মিস্ত্রির কাজ করে নূর মোহাম্মদ। সে আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একইরকম কষ্টের কথা শুনায় সে। বাবা মাঠে কাজ করতেন। এখন তাঁর কাজ নেই। লকডাউনের কারণে তারও মিস্ত্রির কাজ বন্ধ। মা-বাবাকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে নূর মোহাম্মদদের এখন খুব দুর্দিন। সে জানায়, পাঠশালা থেকে এই উপহার সামগ্রীতেই তাদের এবার ঈদ করতে হবে।
বেলা ১১টায় রাজশাহীনগরের রানিনগর শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থিত আলোর পাঠশালার মাঠে এই ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আরমান আলী, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, আলোর পাঠশালা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা, পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন, সহকারী প্রধান শিক্ষক রিপন মাহমুদসহ অন্যান্য শিক্ষক, প্রথম আলোর রাজশাহী বন্ধুসভার সভাপতি বেলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হাসান , প্রথম আলোর রাজশাহী বন্ধুসভার বন্ধু ইশরাত সুলতানা, ফরহাদ হোসেন, সুলতান শেখ ও স্থানীয় অভিভাবক গাজী শেখ প্রমুখ।
কাউন্সিলর আরমান আলী বলেন, প্রথম আলোর এই উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান। করোনাকালে দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে তারা শিক্ষাদানের পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছে, তা অন্যদের অনুসরণ করা উচিত।
আরবিসি/০৭ মে/ রোজি