• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন

আলোচনায় ১৪১ বনাম ৫৪৪

Reporter Name / ১৭৫ Time View
Update : শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য আবদুস সোবহান তাঁর শেষ কর্মদিবসে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনায় আসছে বিতর্কিত আরও এক নিয়োগের ঘটনা।

২০০৪ সালে তৎকালীন উপাচার্য ফাইসুল ইসলাম ফারুকী ৫৪৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই নিয়োগ নিয়েও তখন চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। মামলা হয়েছিল। ওই ৫৪৪ জনের মধ্যে শ দেড়েক কর্মচারীর নিয়োগ আজও পাকাপোক্ত হয়নি। তাঁরা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। উঠে আসছে ১৭ বছর আগের আলোচিত ৫৪৪ কর্মচারী নিয়োগের কথাও।
যেসব পদে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আগের বিজ্ঞাপিত কিছু পদও। সেই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করেছেন। কিছু পদে পরীক্ষাও হয়েছে। ওই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে কেউ মামলা করলেই এই অ্যাডহক নিয়োগ বাতিল হয়ে যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র ও নিয়োগ তালিকা থেকে জানা যাচ্ছে, এবার নিয়োগ পাওয়া ১৪১ জনের মধ্যে রয়েছেন ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী এবং ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী। তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান, স্ত্রী ও স্বজন, ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতা-কর্মী, সাংবাদিক নেতাসহ চারজন সাংবাদিক রয়েছেন। তাঁদের নিয়োগপত্রে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩–এর ১২(৫) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নলিখিত প্রার্থীদের তাঁদের নামের পাশে বর্ণিত পদ ও স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) অনধিক ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। এ নিয়োগ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, যেসব পদে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আগের বিজ্ঞাপিত কিছু পদও। সেই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করেছেন। কিছু পদে পরীক্ষাও হয়েছে। কিছুতেই তাঁদের বাদ রেখে ওই পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া যায় না। ওই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে কেউ মামলা করলেই এই অ্যাডহক নিয়োগ বাতিল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চিঠি দেওয়া হয়। তড়িঘড়ি এই নিয়োগকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবৈধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় উপাচার্যের শেষ কর্মদিবসের এই নিয়োগ টিকবে বলে মনে করছেন না অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, নিয়োগ বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশটাই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী। তখনই সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য পদত্যাগ করতে পারতেন। এভাবে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান বাঁচানো উচিত ছিল। তাহলে তিনি নন্দিত হতেন। আজ তিনি সবচেয়ে নিন্দিত একজন উপাচার্য হিসেবে বিদায় নিলেন।

 

এদিকে বিধি অনুযায়ী উপাচার্যের আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নিয়োগপত্রে সই করে থাকেন। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই বিধির ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। রেজিস্ট্রার, এমনকি অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারকে পাশ কাটিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবার তাঁদের অব্যাহতিও দেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ নিয়োগে সই করার ব্যাপারে রেজিস্ট্রার আপত্তি করেছিলেন। নিয়োগে সই করার জন্য রেজিস্ট্রারকে আনতে বুধবার দুপুরে গাড়ি পাঠিয়েছিলেন উপাচার্য। ওই দিন বিকেলে গিয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতারা। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান করেন। একপর্যায়ে রেজিস্ট্রারের পরিবার থেকে পুলিশ ডাকা হলে তাঁরা চলে আসেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে রেজিস্ট্রার ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান। পরে এমন নিয়োগের ব্যাপারে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারও সম্মত হননি। অবশেষে নিয়োগপত্রে সই করার জন্য সংস্থাপন শাখার উপরেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলীকে আদেশ দেন উপাচার্য। পরে ইউসুফ আলীই সবার নিয়োগপত্রে সই করেছেন।

রেজিস্ট্রারের দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এভাবে নিয়োগ পাওয়া এই ব্যক্তিদের আনন্দ করার কিছু নেই। বরং তাঁদের কান্নার দিন শুরু হলো। এভাবে নিয়োগ না নিলে পরবর্তী প্রশাসন এসে তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারত। সেই সুযোগ তাঁরা হাতছাড়া করে ফেললেন। বিষয়টি তাঁদের বোঝানো হয়েছে, কিন্তু তাঁরা শোনেননি।

এর আগে ২০০৪ সালে বিএনপির শাসনামলে উপাচার্য ফাইসুল ইসলাম ফারুকী ৫৪৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে। ওই নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনজীবী আবু আসলাম মামলা করেছিলেন। পরবর্তী সময় সমঝোতার মাধ্যমে মামলাটি তুলে নেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে কর্তৃপক্ষ নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এর মাধ্যমে ৫৪৪ জনের মধ্য থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ জনকে বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁরা এখন বৈধ কর্মচারী। বাকিদের আর নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাঁদের জায়গায় নতুন প্রার্থীদের নেওয়া হয়। বাদ পড়া কর্মচারীরা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কর্মরত। যেদিন তাঁদের ‘না’ করা হবে, সেদিনই বিদায় নিতে হবে। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছুই পাবেন না।

এবারের অবৈধ নিয়োগে সই না করার জন্য আত্মগোপনে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে তাঁরা ফাইলটা হাতে পান। এর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়াও হয়নি। উপরেজিস্ট্রার নিয়োগপত্রে সই করেছেন। (সূত্র : প্রথম আলো)

আরবিসি/০৭ মে/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category