রোজিনা সুলতানা রোজি : তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্থানীয় হাটগাঙ্গোপাড়া ডিগ্রি কলেজে যেতে হতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মেয়ে শ্রাবন্তি রাণিকে (১৬)। এতে খুব কষ্ট হতো। তবে তাকে আর কষ্ট করতে হবে না। হেঁটেও যেতে হবে না কলেজে। এখন নিজ গ্রাম বানাইপুর থেকে নিজের সাইকেলে কলেজে যেতে পারবে সে।
শুধু শ্রাবন্তি নয়, তার মতো রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আরও নয়জন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ছেলে-মেয়েদের আর হেঁটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে না। সবাই পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে একটি করে বাইসাইকেল। বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে তাদের হাতে একটি করে বাইসাইকেল তুলে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এলাকা উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির স্কুল-কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে এককালীন বাইসাইকেল দেওয়া হয়। এর আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গরীব পরিবারের ১০জন ক্ষুদ্রজাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়।
বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের নিজ দপ্তরে আমন্ত্রণ জানান। এসময় তাদের লেখাপড়ার ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে তাদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে একটি করে বাইসাইকেল তুলে দেওয়া হয়। গেল বছর একই প্রকল্পের আওতায় আরও ৫০জন শিক্ষার্থীকেও একটি করে বাইসাইকেল উপহার দেওয়া হয়েছিল।
বাইসাইকেল পেয়ে হাটগাঙ্গোপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী কুমারি রিয়া রাণি (১৪)। সে জানায়, তার বাবা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে কোনোরকম সংসার চালান। সে নিজের ইচ্ছাশক্তি নিয়ে স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে আসছে। প্রতিদিন আড়াই কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে আসতে হয়। অনেক দিন নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তবে সাইকেল পাওয়ার কারণে আর হাঁটতে হবে না। তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এভাবে বাইসাইকেল উপহার দেওয়া হবে তা ভাবতে পারেনি বলে মন্তব্য করে। কলেজছাত্র চাঁইপাড়া গ্রামের সুব্রত কুমার (১৬) জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাইসাইকেল পাওয়ার কারণে অনেক সুবিধা হলো। হেঁেট আর ঘাম ঝড়াতে হবে না। এখন থেকে বাইসাইকেলে চড়ে কলেজে যাতায়াত করতে পারবে।
ক্ষুদ্রজাতিসত্তাদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বাগমারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির পরিচালক কলেজশিক্ষক সমোরেশ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, বাগমারার ইউএনও ক্ষুদ্রজাতিসত্ত্বার শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এভাবে বাইসাইকেল উপহার দিয়ে তাদের অবাক করে দিয়েছেন। বাইসাইকেল উপহার পাওয়ার কারণে গরীব শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ বলেন, গোপনীয়তা রক্ষা করে উপজেলায় বসবাস করা ক্ষুদ্রজাতিসত্ত্বার ১০জন গরীব- মেধাবীদের তালিকা সংগ্রহ করে তাঁদের নিজ দপ্তরে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি করে বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তাদের কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরবিসি/২৮ এপ্রিল/ রোজি