বিশেষ প্রতিবেদক: বছর কয়েক আগে গ্রামের পুকুর, জলাশয়, বিলে প্রচুর পরিমাণ শাপলা, শালুক ফুটতো। গ্রামের ছেলেমেয়েরা সেই শাপলা ফুল কান্ডসহ তুলে নিয়ে এসে মালা তৈরি করে গলায় পরত। হামেশায় চোখে পরত তাদের এসব খেলাধুলা। কিন্তু এখন শাপলফুল আর তেমন চোখে পড়ে না। বর্তমানে যা আছে তা নানা কারণে বিলুপ্তির পথে। আর শহরে জীবনে সেই শাপলা ফুল দেখেতে পাওয়া খুবই দুঃস্বাধ্য ব্যাপার।
ভাবুন, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর যদি দেখেন আপনার বাসার ছাদ বা বেলকনিতে শাপলা ফুটে আছে তাহলে ব্যাপারটা নেহাত মন্দ হয় না। কিন্তু তা কি কখনও সম্ভব? হুম সম্ভব! নাটোরের চলনবিলের শাপলা ফুটবে আপনার বেলকনি বা বাসার ছাদে! সে উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাম্মী আকতার মিম।
মিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায়। চলনবিল থেকে শাপলা, শালুকের বীজ সংগ্রহ করে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করেন। পরে সেগুলো নিজের ফেসবুক পেইজ ‘রংধনু’র মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি করেন। শুধু শাপলাই নয় বিভিন্ন ধরনের ফুল, সবজি, ঔষধি গাছেরও বীজ বিক্রি করেন তিনি। চাইলে আপনিও সেই বীজ কিনে নিয়ে আপনার বারান্দায় বা ছাদে ফুটাতে পারেন শাপলা, পদ্মফুল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শৌখিন মানুষজন তার থেকে এসব বীজ সংগ্রহ করছেন। অনেকেই তাদের ছাদে ফুল ফুটাতেও সক্ষম হয়েছেন।
জানতে চাইলে মিম বলেন, আমার কাছে দেশি তিন ধরনের শাপলার বীজ পাওয়া যায়। একটা আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা যেটা সাদা রংয়ের। বাকি একটা নীল যেটাকে শালুক বলে আর লালটা রক্তকমল নামে পরিচিত। এসব বীজ চলনবিল থেকে সংগ্রহ করি। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা এসব বীজের জার্মিনেশন রেট প্রায় ৯৯%। বাসার ছাদ বা বেলকনিতে খুব সহজেই এই শাপলা ফুল ফুটানো সম্ভব। শাপলা সাধারণত অভিযোজিত শ্রেণীর উদ্ভিদ। এরা পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেম বৃদ্ধি করে আকার বাড়ায়। আবার পানি কমলে আকারও কমে। ৫ লিটার পানির টবেও এদের রোপন করা যায়। তবে ফুল হবে ছোট।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ বলেন, চলনবিলে প্রায় ৩-৪ প্রজাতির শাপলা ফুল পাওয়া যায়। এগুলোর বীজ সংগ্রহ করে বাসার মধ্যে রেখে টবে ফুল ফুটানো সম্ভব। একটি পরিপক্ক বীজকে যদি ভিজিয়ে প্লাস্টিকের বোতলে রাখা হয় তাহলে দেখা যাবে কয়েকদিন পর বীজ থেকে কুঁড়ি বের হয়েছে। পরে একটা-দুইটা পাতা গজাবে। একটু বড় হলে সেটা টবে বা বড় মাটির পাত্রে কাদামাটি পানিতে রাখলে আস্তে আস্তে গাছ বড় হবে। এক সময় সেখানে ফুল ফুটবে। আমার বাসাতেও রয়েছে।
মিমের কাছ থেকে শাপলা আর পদ্ম ফুলের বীজ সংগ্রহ করেছিলেন চট্টগ্রামের কামরুল ইসলাম। তিনি জানান, ইতোমধ্যে কয়েকটি গাছে পদ্মফুল ফুটেছে। আর শাপলা ফুলের বীজগুলো কিছুদিন হলো লাগিয়েছি। মাত্র চারা গজিয়েছে। আশা করছি পদ্মর মতোই শাপলাও ফুটবে।
আরবিসি/২৭ এপ্রিল/ রোজি