স্টাফ রিপোর্টার : করোনাকালেও এখানকার মাছ চাষীরা বসে নেই। তারা মহামারি করোনা কালেও মাছ উৎপদানে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। মাছ চাষ ও রপ্তানী এ উভয় খাত মিলে বাগমারায় এখন ২০ হাজারের বেশি বেকারের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা কেউ ঘরে বসে নেই। অবিরাম ভাবে তারা উৎপাদন করে চলেছে নানান জাতের মাছ। মাছ চাষী ও স্থানীয় পুকুর মালিকদের মতে, প্রাকুতিক অনুকুল পরিবেশের কারণে এখানে উৎপাদন করে ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যায়। এখানে মাছের রোগ বালাই কম হয়। মাটি ও পানির গুনে এখানেকার মাছ বেশ সুস্বাসু হওয়ায় দেশব্যাপি এ মাছের চাহিদা ও পরিচিতি রয়েছে ব্যাপক।
উপজেলা মৎস দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ছোট বড় আকার মিলে বাগমারায় মোট পুকুর দিঘীর সংখ্যা ৭ হাজার ৩৮৮ টি। এসব পুকুর দিঘীর মোট আয়তন প্রায় ২৪ হাজার ৮৬৩ হেক্টর। পুরোবছর জুড়ে এসব পুকুর দিঘীতে উৎপাদন হয় রুই কাতলা মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্লাস কার্প, ব্লাড কার্প, মিনার কার্প, চিতলসহ প্রায় ১০-১২ প্রজাতির মাছ। এসব পুকুর দিঘী থেকে বছরে প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে।
স্থানীয় বাজারে বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে বছরে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন। অতিরিক্ত ৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী হয়ে থাকে। এসব মাছ উৎপাদন পরিবহন ও রপ্তানীসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে এলাকার প্রায় ২০ হাজার বেকারের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিদিন এ সেক্টরে কর্মরত লোকজনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
উপজেললা মৎস কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন জানান, বাগমারা এখন মাছ চাষের জন্য একটি মডেল উপজেলায় পরিনত হয়েছে। বাগমারার ১৬টি ইউনিয়নে তাদের নিযুক্ত একজন করে মৎস সহায়ক দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মৎস চাষীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবার কখনও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে সহায়ত করে থাকেন। তাদের কাছে একটি করে কীট বক্স প্রদান করা হয়েছে। যা দিয়ে তারা পুকুর দিঘীর পানি পরীক্ষা করে থাকেন।
উপজেলা মৎস দপ্তরের ক্ষেত্র সহকারি কমল সরকার জানান, মাছ চাষের নতুন গবেষণা ও পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য বাগমারায় ৩২টি পুকুর দিঘীতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া গত মাসে ৩টি মৎস সমবায় সমিতিকে স্বল্প খরচে মান সম্পন্ন খাদ্য তৈরির জন্য বিনা মূল্যে মৎস খাদ্য তৈরির মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে।
অপরদিকে করোনাকালেও বাগমারার মাছ রপ্তানীতে জেলার শীর্ষে অবস্থান করছে বলে জানান স্থানীয় মৎস ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা।
আড়ৎদার অরুন কুমার জানান, বাগমারায় ছোট বড় প্রায় বিশটি আড়ৎ রয়েছে। এসব আড়ৎ থেকে প্রতিদিন ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় প্রায় ১শ’ টি ট্রাকে করে তাজা মাছ রপ্তানী হয়ে থাকে।
মৎস চাষী দারাজ আলী জানান, করোনাকালেও বাগমারায় তাদের মাছ উৎপাদন ও রপ্তানী থেমে নেই। পদ্মার রুপালী ইলিশের মতই বাগমারার মাছ দেশের বিভিন্ন জেলায় সুনাম অর্জন করে চলেছে।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা রবিউল করিম বলেন, এখন মাছ চাষ অনেক উন্নত হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমরা মাছ চাষীদের সাথে প্রতিনিয়ত মতবিনিময় করে আধুনকি সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এ বাগমারার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, বাগমারায় করোনাকালে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যপক অবদানের রখেছেন চাষীরা। মাছ চাষীরাও বাগমারার মাছ দিয়ে সারাদেশে পরিচিতি এনেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীতে বাগমারায় মাছ চাষের আরো প্রসার ও আরো বিপ্লব ঘটানো হবে।
এখানে মাছের একটি কেন্দ্রীয় বাজার ও একটি ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন করা হবে। সেখানে মাছের একটি কোল্ড স্টোরেজ থাকবে। ফলে মাছ উৎপাদন ও রপ্তানীর সাথে জড়িত সবাই উপকৃত হবেন।
আরবিসি/২৪ এপ্রিল/ রোজি