আরবিসি ডেস্ক : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ৯ বছর পর স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দলটির মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে আসা দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য মির্জা আব্বাস দীর্ঘদিন পর এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিষয়ে চাঞ্চ্যলকর কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
যেসব বক্তব্য দলের কোনো নেতা দীর্ঘ নয় বছরেও বলেননি। তার সেই বক্তব্য ঘিরে ওই দিনই দলের মধ্যে শুরু হয় নানা আলোচনা সমালোচনা।
সূত্র জানায়, তার বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরেও আসে বিষয়টি। তিনি তৎক্ষণাৎ মির্জা আব্বাসের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেন। তার চাপে পড়েই একদিন পর নিজ বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মির্জা আব্বাস। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আব্বাস নিজেই স্বীকার করেন যে, পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে এই সংবাদ সম্মেলন করতে হচ্ছে। তিনি অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য মিডিয়াকে দায়ী করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, মিডিয়া আমার বক্তব্যকে কাটপিস করে প্রচার করেছে। আমি ইলিয়াস আলী সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছি তা সঠিকভাবে মিডিয়ায় আসেনি। হঠাৎ করে মিডিয়া কেন আমাকে টার্গেট করলো তা আমার জানা নেই।
জানা যায়, গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) ইলিয়াস আলী গুমের বছরপূর্তিতে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি জানি, আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি। তাহলে গুমটা কে করলো? এই সরকারের কাছে এটা আমি জানতে চাই। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার মারাত্মক রকমের বাগবিতণ্ডা হয়। তাকে ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিলেন। ’
ওই আলোচনা সভায় উপস্থিত দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সেই যে পেছন থেকে দংশন করা সাপগুলো, আমার দলে এখনো রয়ে গেছে। যদি এদের দল থেকে বিতাড়িত না করেন, তাহলে কোনো পরিস্থিতিতেই দল সামনে এগোতে পারবে না। ’
মূলত মির্জা আব্বাসের এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই দলের নেতাকর্মীদের ভেতরে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। যে প্রতিক্রিয়ার কারণে মির্জা আব্বাস সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘যেসব বক্তব্য মিডিয়ায় এসেছে তার জন্য আমি অথবা আমার দল দায়ী নয়’। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) মির্জা আব্বাসকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশে মির্জা আব্বাসের কাছে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মির্জা আব্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি কোনো চিঠি পাইনি’। তবে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বৃহস্পতিবার রাতেই তার কাছে চিঠি পৌঁছেছে। দলের নেতাকর্মীরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা কী ব্যাখ্যা দেন সেটা দেখার জন্য।
সূত্র জানায়, দলীয় নোটিশ পেয়ে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন মির্জা আব্বাস। যে কোনো সময় দল থেকে পদত্যাগেরও ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।
জানা গেছে, দলের যে কয়জন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে মির্জা আব্বাসই একমাত্র ব্যক্তি যিনি জীবনে অন্য কোনো দল করেননি। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে তিনি দলে যোগ দেন। রাজধানী ঢাকার রাজনীতিতে মির্জা আব্বাসের প্রভাব দীর্ঘদিনের। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে তার যতটা প্রয়োজন তার চেয়ে বিএনপিরই তাকে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।
জানতে চাইলে, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কারণ দর্শানো নোটিশের ব্যাপারে আমি অবগত নই। পত্র-পত্রিকার মারফতে যেটুকু জানতে পেরেছি। এর বাইরে কিছু জানি না।
একটি সূত্র জানায়, শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। পরবর্তী করণীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই হবে।
আরবিসি/২৩ এপ্রিল/ রোজি