• শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ অপরাহ্ন

লকডাউনেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার

Reporter Name / ১২৫ Time View
Update : শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। বাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমন আতঙ্কে সেল প্রেসার বেড়ে যায়।

একই সঙ্গে শেয়ারের দাম কমতে থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট দেখা দেয়। পতনমুখী বাজারে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঘোষণা করেন লকডাউনে ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজারও খোলা থাকবে। বিএসইসির কঠিন সিদ্ধান্তে লকডাউনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। লকডাউনে ১৭ দিনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ৩৪৭ পয়েন্ট এবং অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১০০৯ পয়েন্ট। শুধু তাই নয় লকডাউনে বিনিয়োগকারীরা ২৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছেন।
বিএসইসির শক্ত অবস্থানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। আস্থা ফিরে আসায় সর্বাত্মক লকডাউনেও ইতিবাচক রয়েছে পুঁজিবাজার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিনিয়োগকারীসহ একাধিক বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানিয়েছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতবছর লকডাউনে ৬৬ দিন পুঁজিবাজার বন্ধ ছিল। এতে করে অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়ে বাজার ছেড়েছেন। এবার লকডাউন শুরুর আগে গুজব ওঠে বাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে তিন দিনেই ডিএসইর সূচক ২৮২ পয়েন্ট এবং সিএসইর সূচক প্রায় এক হাজার পয়েন্ট কমে যায়। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু লকডাউনে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিলে বিএসইসিও ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই নিয়ে কিছুটা সমালোচনা হলেও। বিএসইসির ইতিবাচক সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার বলে তাঁরা মনে করেন।

এ ব্যাপারে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর লকডাউনে পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীরা হতভম্ব হয়ে পড়েছিল। তবে লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্তটা ইতিবাচক। বর্তমান পরিস্থিতি আমরা মানিয়ে নিতে পেরেছি। এই করোনার মধ্য দিয়েই আমাদের চলতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট হয়েছে। তবে লকডাউন আসছে আসছে ভেবে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেছিল। ঠিক সেই সময়ে বিএসইসির সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজার খোলা থাকবে। যা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে।

তিনি বলেন, বাজার এখন স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। বাজারে সেল বাই ভালো হচ্ছে। বাজার তার স্বাভাবিক নিয়মে চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

লকডাউনে পৃথিবীর কোনো দেশেই পুঁজিবাজার বন্ধ হয়নি তাই আমাদের দেশেও পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ।

তিনি বলেন, গত বছর লকডাউনে পুঁজিবাজার বন্ধ রাখাটা ছিল বিএসইসির ভুল সিদ্ধান্ত। নতুন কমিশন বাজার খোলা রাখাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে।

প্ুঁজিবাজারে সূচক বাড়বে কমবে এটা পুঁজিবাজারের ধর্ম। তাই বলে এ বাজার বন্ধ করতে হবে কেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সর্বাত্মক লকডাউনে টানা আট কার্যদিবস সূচক বাড়াকেও তিনি ইতিবাচক বলেও তিনি মনে করেন।

লকডাউনে বাজার ইতিবাচক হওয়াটাকে আশীর্বাদ বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

তাদের মতে, লকডাউনে পুঁজিবাজার খোলার রাখার বিএসইসির সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনে পুঁজিবাজার খোলা রাখাটা বিনিয়োগকারীদের জন্য আশীর্বাদের মত হয়েছে।

বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে টানা উত্থানকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন তিনি।

তিনি বলেন, যেহেতু ইনডেক্স ধীরে ধীরে বেড়েছে। তাই টানা সূচক বাড়াটা স্বাভাবিক। বাজারের সক্ষমতা আছে, বাজারে বিনিয়োগ আসছে, তারল্য সংকটও নেই। আমরা আশা করছি পুঁজিবাজার আরো ভালো পর্যায়ে যাবে। সামনে ঈদ পর্যন্ত পুঁজিবাজার এমনটাই চলবে বলেও তিনি আশা করেন।

এদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায় ৫ এপ্রিল লকডাউনে প্রথম দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স (লেনদেন শুরুর আগে) ছিল ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্ট লকডাউনে ১৭ দিন অর্থাৎ ২২ এপ্রিল লেনদেন শেষে এটি ৫ হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ লকডাউনের ১৭ দিনে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৩৪৭ পয়েন্ট। ডিএসই অন্য দুই দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ৭১ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৮১ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ১২৩৭ ও ২০৮৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। গত ৫ এপ্রিল এই দুই সূচক লেনদেন শুরুর আগে ১১৬৬ ও ১৯০১ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।

লকডাউনে ১৭ দিনে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। গত ৫ এপ্রিল লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ৪৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা ২২ এপ্রিল সেটি বেড়ে চার লাখ ৬৮ হাজার ৩১৬ কোটিতে অবস্থান করছে।

অপরদিকে গত ৫ এপ্রিল লেনদেন শুরুর আগে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪ হাজার ৭১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। ২২ এপ্রিল লেনদেন শেষে এটি ১৫ হাজার ৭২৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ লকডাউনের ১৭ দিনে সিএএসপিআই সূচক এক হাজার ৯ পয়েন্ট বেড়েছে।

আরবিসি /২৩ এপ্রিল/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category