• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ পূর্বাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
রাজশাহীতে লাঞ্ছিতের পর ১২ ঘন্টা মেসে অবরুদ্ধ ছাত্রীরা, গ্রেপ্তার ৩ গভীর রাতে রাজশাহী সীমান্তে বিএসএফের দফায় দফায় গু’লি বর্ষণ, জনমনে আতঙ্ক রাজশাহীর বাগমারায় তেলের ট্রাক বিস্ফোরণে পুড়লো ৪শ ব্যারেল তেল, ৮ দোকান রাবির ৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৩৩ জনের নানা মেয়াদে শাস্তি রাজপাড়া থানার নতুন ভবন উদ্বোধন করলেন আরএমপি পুলিশ কমিশনার উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক পাকিস্তানি চিনি, আলুসহ শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে এলো সেই জাহাজ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা গেছেন রাজশাহীর চারঘাটে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ সার সঙ্কটে রাজশাহীতে ব্যাহত হচ্ছে আলুচাষ, দামও অতিরিক্ত

বাগমারায় বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন

Reporter Name / ১৩২ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাগমারায় থামছে না অবৈধ পুকুর খনন। অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হলেও কোন লাভ হচ্ছেনা। এলাকা ভিত্তিক সিন্ডিকেট চক্র বন্যা পরবর্তীতে আবারও মেতে ওঠেছে ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খননে।
তারা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এলাকার কিছু টাউট ও দালালদের অর্থের বিনিময়ে হাত করে প্রকাশ্য দিবালোকেই পুকুর খনন চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার সর্বত্রই এখন পুকুর খননের মহোৎসব চলছে।

গত ১৬ এপ্রিল উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি দু’বিলার বিলে আব্দুল জব্বার প্রায় ৫০ বিঘা ফসলী জমিতে অবৈধ ভাবে দীঘি খনন করছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন প্রশাসন। অভিযানে দুইটি ভেকুর যন্ত্রাংশ নষ্ট করা হলেও লাভ হয়নি মোটেও। নতুন করে ভেকু এনে আরাও দীঘি খনন কাজ শুরু করেছে সেখানে।
এদিকে এ পুকুর খননের বিরুদ্ধে এবং এলাকায় জলাবদ্ধতার হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে কৃষকরা সংঘবদ্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেন।

পরিবেশ আইন অমান্য করে কৃষি জমির (টপসয়েল) ও পুকুর খননের মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। এতে কথিপয় প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। আবার এ মাটি ট্রাকে পরিবহন করায় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তা ভেঙ্গেচুড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষি জমির মাটি কাটা দ-নীয় অপরাধ। আর জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে পুকুর খনন করাও দ-নীয় অপরাধ। পরিবেশ আইন অনুয়ায়ী কৃষি জমির মাটিকাটা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

উপজেলার মাড়িয়া, শিবজাইট, তালতলি, যোগিপাড়া, মাধনাগর, সাইধাড়া, বাইগাছা মোহনগঞ্জ এলাকায় কৃষি জমির মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। আবার খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় ভাবে কাঁকড়া নামীয় এসব ট্রাকের অবাধ চলাচলের কারণে উপজেলা সদ্য নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙ্গেচুড়ে একাকার হয়ে গেছে। এছাড়া ওইসব ট্রাক থেকে মাটি পড়ে ধুলোবালির স্তুপ জমে যাওয়ায় ওই সব রাস্তা দিয়ে যানচলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, এ সমস্যাটি বাগমারায় চরম আকার ধারন করেছে। বিষয়টি উপজেলা সমন্ময় কমিটির সভায় তুলে ধরে একটি রেজুলেশন করা হলেও বাস্তবে কোন কাজ হচ্ছে না।
ইউএনও’র দপ্তরের আবেদন ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাগমারায় টানা তিনদফা বন্যায় কৃষি, মৎস্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার উপরে। অতি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণ পানি নিষ্কষনের বিভিন্ন ব্রীজ কালভাটের মুখ বন্ধ করে সেখানে মাছ চাষ করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ জন্য পুকুর খনন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর উদ্যোগ গ্রহন করেছে। এছাড়া বাগমারায় পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে স্থানীয় এক আইনজীবির হাইকোর্টে করা রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত বাগমারায় পুকুরখননে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও আদালতের এমন নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও তার তোয়াক্কা করছেন না স্থানীয় কিছু স্বার্থন্মেষী মহল। তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এলাকার হাজার হাজার কৃষকের পেটে লাথি মারতেও দ্বিধাবোধ করছেন না।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, সাইপাড়া গ্রামের আব্দুল জব্বার, ভবানীগঞ্জের নয়ন সহ বিভিন্ন ব্যক্তি বছর প্রতি বিঘা জমির জন্য কৃষকদেরকে ২০-২৫ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে জমিগুলো এরি মধ্যে চুক্তিকরা হয়। সেই সকল জমিতে উৎসব মূখর পরিবেশে চলছে দীঘি খনন।
ওইসকল স্থানে দীঘি খনন করা হলে ফসল উৎপাদন সহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত সহ ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। বর্ষার পানি সহজে নামবে না। ফলে বাড়িঘর ও ফসলাদি ডুবে আমরা ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হবে কৃষক।
এ বিষয়ে কয়েকজন দীঘি খননকারীর সাথে কথা হলে তারা ফসলী জমির কথা অস্বীকার করে বলেন জমিগুলো সারা বছর কুচুরীপনায় ভরে অনাবাদী পড়ে থাকে। তাই সেখানে পুকুর খননের উদ্যোগ নিয়েছি।

বাগমারায় পুকুর খনন ও পরিবেশের ভারসাম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার কুষিবিদ রাজিবুর রহমান জানান, বাগমারায় পুকুর দিঘী খনন বর্তমানে মারাত্মক ঝুকির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বারে বাগমারায় বন্যায় যে ভয়াবহ রুপ এলাকাবাসী দেখছে তা এ যত্রতত্র পুকুর খননের কারণেই ঘটেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ বলেন, কোন ভাবেই বাগমারার যে কোন এলাকায় আর পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না। প্রতিটি এলাকায় পুকুর খনন বন্ধে আমাদের সোর্স নিয়োগ করা আছে।
খবরপাওয়া মাত্রই অতি দ্রুত সেখানে গিয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পুকুর খননকারী যেই হোক তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

 

আরবিসি/২২ এপ্রিল/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category