• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন

বন্ধ ক্যাম্পাসে পশুপাখির সেবায় ব্রত ওরা

Reporter Name / ১৩৬ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১

বিশেষ প্রতিবেদক : মধ্যদুপুর। সূর্য তখন ঠিক মাথার উপরে। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রাকসু ভবনের সামনের লিচু গাছটার নিচে ব্যস্ত সময় পার করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। কেউ চাল আর ডাল পানি দিয়ে ধুয়ে পাতিলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আশপাশের গাছগুলো থেকে শুকনো ডালপালা এবং গাছের নিচে শুকনো পাতাগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আসছেন। আবার কেউ সেসব খড়কুটো দিয়ে ইটের বানানো চুলোতে আগুন জ্বালিয়ে পাতিলে তা দিচ্ছেন। খিচুড়ি রান্না করছেন তাঁরা। আর এই খিচুড়ি রান্না হচ্ছে ক্যাম্পাসের কুকুর-বিড়ালদের জন্য।

পাশেই তাদের ঘিরে শুয়ে আছে কয়েকটি কুকুর। রান্না শেষ হলেই তাদের খেতে দেওয়া হবে। তৃপ্তি সহকারে খেতে পারবে সেই আনন্দে তারা লেজ নাড়াচ্ছে। রান্না শেষে ‘আয় আয়’ বলে ডাকতেই চারপাশ থেকে দৌড় দিয়ে সামনে এসে হাজির অনেক কুকুর। কিছু কুকুরের আবার নামও দিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। কারও নাম লাইলী, আবার কারও নাম ফাটাকেষ্ট।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ফের চলতি মাসের গত ১৪ তারিখ থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল খাবারের দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ক্যাম্পাসে থাকা দুইশতাধিক কুকুর-বিড়ালকে না খেয়ে থাকতে হয়। তাই লকডাউন শুরুর পরেরদিন ১৫ এপ্রিল থেকে ‘মানুষ তো কোনও না কোনোভাবে খাবার সংগ্রহ করবে, কিন্তু কুকুর তো পারবে না’ এই চিন্তা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ কুমার, আইন বিভাগের দিল আফরোজ দোলা, ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স ইশতিয়াক মাহমুদ হাসান, একই বিভাগের বিদেশি শিক্ষার্থী তামির হোসনে, ফোকলোর বিভাগের পুনাম প্রিয়াসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে কুকুর-বিড়ালদের খাওয়াতে শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে প্রসেনজিৎ কুমার বলেন, গত বছর করোনার দিনগুলোতে প্রায় আটমাস যাবত ক্যাম্পাসের কুকুর-বিড়ালদের আমরা রান্না করে খাওয়াইছি। এতে তাদের প্রতি আলাদা একটা মায়া তৈরি হয়ে গেছে। সেই মায়া থেকে এবারও আমরা তাদের রান্না করে খাওয়াচ্ছি। আর তাদের খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো না কোনো শিক্ষক আমাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। আমরা সেই টাকা দিয়ে চাল, ডাল, মুরগীর পা’সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাজার করে রান্না করি।

ওদের খাওয়াতে কেমন লাগে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওদের লেজ নাড়ানো দেখে আমরা তৃপ্তি পাই। ওদের খাওয়া দেখে আমরা শান্তির অন্তর ঘরে সুখের দেখা পেয়ে থাকি। একটু প্রাণ খুলে হাসি। এখন অভ্যাসটা এমন হয়েছে যে, তাদের খাবার না দিলে যেন নিজেদেরই ভালো লাগে না।

একসঙ্গে কাজ করা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসের কুকুর, বিড়াল ও পাখিদের খাওয়াতেই প্রশান্তি মেলে আমাদের। প্রতিদিন দুপুরে তাদের খাবার দেই। এই কয়েকদিনে আমরা পাখিদেরকেও পোষ মানিয়ে ফেলেছি। ওরা প্রতিদিন কোনও ভয় ছাড়াই এসে আমাদের আশেপাশে ভিড় করে। ওদের কিচিরমিচির শব্দগুলো আমাদের ভালো লাগে। আমরা লকডাউন চলাকালীন সময় পর্যন্ত তাদের খাওয়াবো।

আরবিসি/২০ এপ্রিল/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category