আরবিসি ডেস্ক : ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম। মাঝখানের সময়টা দীর্ঘ হলেও পাল্টায়নি হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ধরন।
সবশেষ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক নাশকতা চালানো হয়। ধর্মের নামে জনসাধারণকে উস্কে দিয়ে দেশজুড়ে আবারও তাণ্ডব চালানোর পর হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথা বলেছে প্রশাসন।
সরাসরি হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ একে একে গ্রেফতার করা হচ্ছে হামলায় প্ররোচনাকারী হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের। যার ধারাবাহিকতায় গ্রেফতার করা হলো হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে। যিনি সবশেষ দেশজুড়ে নাশকতায় প্রত্যক্ষ মদদদাতা এবং কথিত স্ত্রীকে নিয়ে রিসোর্টকাণ্ডে ব্যাপক সমালোচিত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সহিংস কর্মকাণ্ডের ঘটনায় একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মামুনুল হক। ওই ঘটনার দীর্ঘ তদন্তে মামুনুলের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এসব সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। এসব ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা হিসেবে মামুনুল হকের নাম এসেছে ঘুরে ফিরে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মামুনুল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। এ জন্যই পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছিলেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল পল্টন থানায় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আরও ২ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
বায়তুল মোকাররম-চট্টগ্রাম-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতার ঘটনার রেশ না কাটতেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে কথিত স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। গত ৩ এপ্রিল মামুনুল হকের অবরুদ্ধের ঘটনায় তার সমর্থকরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
রিসোর্টে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সোনারগাঁ থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় মামুনুল হককে প্রধান আসামিসহ ৮৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
১০ এপ্রিল মামুনুলের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মায়ের সন্ধান ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে পল্টন থানায় একটি জিডি করেন। এর পরদিন নিজের বোনকে মামুনুল হকের স্ত্রী দাবি করে তার সন্ধান চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেন মো. শাহজাহান নামে আরেকজন। তখন থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে লিপি নামে মামুনুলের কথিত তৃতীয় স্ত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়।
এর মধ্যেই একের পর এক মামুনুলের ফোনালাপ ফাঁস হতে থাকে। পবর্তীতে সেসব ফোনালাপের সত্যতা বিষয়ে নিজেই ফেসবুক লাইভে স্বীকার করেন মামুনুল হক।
রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে মামুনুলকে গ্রেফতারের পর ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ বলেন, ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানায় হামলা ও নাশকতার অভিযোগে দায়েরকৃত একটি মামলায় মামুনুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। আমরা মামলাটি তদন্ত করছিলাম, তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে সারাদেশে পুলিশের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা, থানায় হামলা, রেজিস্ট্রার অফিসে হামলা ভাঙচুরসহ অনেকগুলো মামলা রয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছিল, পাশাপাশি আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে নজরদারিতে রেখেছিলাম।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, মামুনুলের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি দেশজুড়ে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়েরকৃত অনেকগুলো মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি মামুনুল হক।
আরবিসি/১৮ এপ্রিল/ রোজি