নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামের জোনাইল গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী শরীফা খাতুন (২০)। তার বাবা লোকমান আলী পেশায় একজন কাঠমিল শ্রমিক। মাতা নার্গিস খাতুন গৃহিণী। কাঠমিলে কাজ করে যে টাকা পান তাতে কোন রকমে পরিবারের পাঁচ সদস্যের ভরণপোষণ চলে।
তিনবেলা ভাত কাপড় জোটানোই যেখানে কঠিন, সেখানে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেয়াটা যথেষ্ঠ দুরুহ বটে। তারপরও অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে ভালো রেজাল্ট নিয়েই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন শরীফা। এবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সাথেই উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজে।
তার এ অভাবনীয় সুযোগে শিক্ষক-সহপাঠী ও স্বজনসহ সবাই খুশি। কিন্তু প্রাণ খুলে যেন হাসতে পারছেন না শরীফা ও তার বাবা-মা। মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশুনার খরচ মিটবে কিভাবে এ দুশ্চিন্তায় ভর্তির সুযোগ পাওয়ার আনন্দও ম্লান হয়ে গেছে।
জানা যায়, বাড়ি ভিটা ছাড়া সামান্য এক খন্ড আবাদী জমি রয়েছে তাদের। এর সঙ্গে কাঠ মিলে কাজ করে যা পান তাই দিয়ে সংসার খরচ চালান শরীফার বাবা। সংসারে চারটি মেয়ে তার। প্রথম মেয়েটি বিয়ে দিয়েছেন। শরীফা দ্বিতীয়। তৃতীয় ও চতুর্থ মেয়েটিও যথাক্রমে ৯ম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
জোনাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিকুজ্জামান জানান, অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও নম্র স্বভাবের মেধাবী শিক্ষার্থী শরীফা আমাদের স্কুল থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে। এর আগে ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল। পরে ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শরীফা খাতুন বলেন, ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। অবশেষে অনেক চেষ্টার পর সুযোগও পেলাম। ভর্তির সুযোগ পেয়ে যতটা খুশি হয়েছি, লেখাপড়ার খরচ কিভাবে আসবে সেটা ভেবে ততটাই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
শরীফার পিতা লোকমান আলী জানান, মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহী। অন্য মেয়ে দুটোও মেধাবী। নিজে শিখতে না পারলেও খুব কষ্ট করেই তাদেরকে লেখাপড়া শিখাচ্ছি। তবে শুনেছি ডাক্তারী পড়াতে নাকি অনেক খরচ। এতো খরচ কিভাবে জোগাড় করবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।
আরবিসি/১৭ এপ্রিল/ রোজি