• সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী দিতে হবে রাজশাহীতে শারদীয় দূর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত পদ্মা নদী সুরক্ষা ও দেশজুড়ে নৌ পথ চালুর দাবিতে ইয়্যাসের স্বারকলিপি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো দৃশ্যমান হবে : ভাইস চ্যান্সেলর ডা. জাওয়াদুল হক কোর্ট হড়গ্রাম কাঁচা বাজারে অতিরিক্ত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত জাতীয় হকি তারকা মিন্টু ও শামীমের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গৃহবধুর মৃত্যু   ঢাকা বোট ক্লাবের নব-নির্বাচিত সদস্য খন্দকার হাসান কবিরকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ক্লাবের শুভেচ্ছা তানোরে স্থানীয়দের তৎপরতায় জলাশয় ভরাটের মাটি ফেলা বন্ধ রাজশাহীতে কসমিকা ডিসট্রিবিউশন অফিসে দূর্ধর্ষ ডাকাতি

পলিতে ভরাট আত্রাই নদী

Reporter Name / ৮৩ Time View
Update : শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১

নওগাঁ প্রতিনিধি: ভরাট হয়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদীর তলদেশ। উত্তাল নদীটি এখন শুধু নামেই নদী। বাস্তবে পরিণত হয়েছে মরা খালে। খরা মৌসুম শুরু হলেই নদীটির পানি হু-হু করে কমতে থাকে। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এর পানি কমে চলে আসে হাটুর নিচে। এসময় এলাকার মানুষ হেঁটেই পারাপার হন নদীটি।

তবে, এবারের খরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত না থাকায় নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাঁচবারের মতো শুকিয়ে গেল নদীটি। অচিরেই খনন বা ড্রেজিং করা না হলে মানচিত্র থেকে নদীটির অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা জানান, ভারতের হিমালয়ের মানস সরোবর থেকে নদীটির উৎপত্তি। এরপর ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর হয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রত্যেক খরা মৌসুমে ভারতের অভ্যন্তরে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন শেষে বাঁধ কেটে দিলে নদীর পানিপ্রবাহ আবারও স্বাভাবিক হয়ে যায়। বারবার বাঁধ দেওয়া কারণেই ক্রমান্বয়ে নদীর তলদেশ ভরাট যাচ্ছে। এ কারণে প্রতিবছর খরা মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়।

স্থানীয়রা আরও জানান, খুব বেশি আগের কথা নয়। আশির দশক জুড়েই নদীটির ভরা যৌবন ছিল। সে সময় আত্রাইয়ে তর্জন-গর্জনে মানুষের বুকে কাঁপন সৃষ্টি হতো। নব্বাইয়ের দশক থেকে ক্রমেই যৌবন হারাতে বসে নদীটি। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে নদীটির আর হারানোর কিছুই নেই। সরু মরা খালে পরিণত হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে।

ভরা যৌবনে আত্রাই নদীর ঢেউয়ের তালে চলাচল করত পাল তোলা অসংখ্য নৌকা। ভাটিয়ালি আর পল্লীগীতি গানের সুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলতেন জেলার আত্রাই, রানীনগর, মান্দা, মহাদেবপুর, ধামইরহাট, পত্মীতলাসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলার নদী কেন্দ্রিক ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে।

এ নদীকে ঘিরে বিভিন্নস্থানে গড়ে ওঠা বড়বড় হাটবাজার সমূহে ব্যবসার জন্য ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, কলাই, গমসহ নানা কৃষি পণ্য নিয়ে সওদাগররা নৌকায় পাল তুলে মাঝি-মাল্লা নিয়ে ছুটে চলতেন। শুধু কৃষি পণ্যই নয়, হাটবাজারগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভোড়াসহ অন্যান্য পণ্য।

ওই সময় আত্রাই নদী ছিল পূর্ণ যৌবন। এ নদীকে অবলম্বন করে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন জীবিকার সহজপথ খুঁজে পেয়েছিলেন। শুধু হাটবাজারই নয়, এ নদী কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। নদীর অথৈ পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের উর্বর জমিতে ফসল ফলাতেন। প্রকৃতির অফুরন্ত পানিতে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জুড়ে সবুজের সমারোহে ভরে উঠতো আত্রাই নদীর দুই ধারের জমি।
জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও আশপাশের এলাকার অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এ নদী। মাছ পাওয়া যেত বছরজুড়ে। জীবিকার জন্য মাছের আশায় জেলেরা রাতদিন ডিঙি নৌকায় জাল দড়ি নিয়ে চষে বেড়াতেন নদীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ধরা পড়তো প্রচুর মাছ। সেই সোনালী দিন শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। সময় গড়িয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভরা যৌবনা নদী এখন মরা খালে পরিণত হওয়ায় আত্রাইকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা অনেক হাটবাজার এখন হয়েছে বিরান অঞ্চল।

কৃষি জমিগুলো পরিণত হয়েছে ধুধু প্রান্তরে। জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্দিন। এক সময়ের ব্যবসা বাণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। এ সবই এখন কালের সাক্ষি। ঐতিহ্যের দিক থেকেও এ এলাকার নদ নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আত্রাই নদী। ভৌগলিক ভাবেও নাম-ডাক ছিল এই নদীটির।

ড্রেজিং ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়ায় নদীটির অস্তিত্ব বিলিন হতে চলেছে। সরকারের নজর না থাকার সুযোগে এক শ্রেণির দখলবাজ নদীটির অনেকস্থান দখলে নিয়ে খুশিমতো ভরাট করে দিচ্ছে।

অনেকে আবার বর্জ্য ফেলে দুষণ ও ভরাট অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে চলছে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন ও পাড় কেটে মাটি বিক্রির প্রতিযোগিতা। এতে হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে নদীটির অস্তিত্ব। অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া না হলে মানচিত্র থেকে মুছে যাবে এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীটির নাম। এতে উপজেলার অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। হুমকির মুখে পড়বে এলাকার জীববৈচিত্র্য।

আরবিসি/১৭ এপ্রিল/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category